সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হাতে বেতের লাঠি, টিঁকিতে আঁটা তুলসি পাতা। আদ্যিকালের রাশভারী সেই পণ্ডিতমশাইয়ের জামানা চলে গিয়েছে কালের গর্ভে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে শিক্ষাব্যবস্থাও। 'বখাটে' ছাত্রকে সোজা পথে আনতে 'বেদম ঠ্যাঙানি'ও বর্তমানে অতীত। তবে এই সময়েও খুব একটা সুখে নেই শিক্ষকরা। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রমশ শিক্ষকের জায়গা নিচ্ছে চ্যাটজিপিটি-র মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অস্তিত্ব সংকটে পড়ুয়াদের জন্য তা নিষিদ্ধ করে খোদ শিক্ষকরাই পড়ে যাচ্ছেন এই প্রযুক্তির ফাঁদে! এবার সেই ঘটনা দেখা গেল মার্কিন মুলুকে। বিনাপয়সার চ্যাটজিপিটি দেখে পড়ানোর অভিযোগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে টিউশন ফি ফেরত চাইছেন পড়ুয়া। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
জানা গিয়েছে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছিলেন শিক্ষক। এমনকী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নোটস তৈরি করছিলেন তিনি। দিনের পর দিন এই ঘটনা লক্ষ্য করছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এলা স্ট্যাপলটন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এহেন কারচুপি নজরে পড়ার পর অভিযোগ দায়ের করলেন ছাত্রী। শুধু তাই নয়, এতদিন ধরে দেওয়া সমস্ত টিউশন ফি ৬.৮ লক্ষ টাকা ফেরত চাইলেন তিনি। এই ঘটনা প্রসঙ্গে স্ট্যাপলটন বলেন, অনেকদিন ধরে বিষয়টি লক্ষ্য করছিলেন তিনি। চ্যাটজিপিটির মতো উদ্ধৃতি, ভুল টাইপিং এগুলি দেখে সন্দেহ হয় তাঁর। ক্লাসের এক বন্ধুকে বিষয়টি জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযোগ জানান তিনি।
ওই ছাত্রীর দাবি, পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থব্যয় করে, নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার হাল যদি এমন হয় তবে তা লজ্জার। চ্যাটজিপিটি থেকেই যদি পড়ানো হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে এত টাকা খরচ করে শিক্ষকের কাছ থেকে পড়ার কী প্রয়োজন। ওই শিক্ষক আমাদের বলেছিলেন, চ্যাটজিপিটি ব্যবহার না করার জন্য, অথচ উনি এখান থেকে আমাদের নোটস দিচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই কর্তৃপক্ষের জেরার মুখে পড়ে অভিযুক্ত শিক্ষক স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি লেকচার দেওয়ার জন্য চ্যাটজিপিটি, পারপ্লেক্সিটি এআই সার্চ ইঞ্জিন এবং গামা নামক একটি এআই প্রেজেন্টেশন জেনারেটরের মতো এআই টুল ব্যবহার করেছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সামনে আসে চ্যাটজিপিটি। অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্বে সাড়া ফেলে দেয় এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। যে কোনও বিষয়ে চ্যাটজিপিটির অগাধ জ্ঞান সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছে পছন্দের হয়ে ওঠে। যদিও বহু স্কুল ও কলেজ এই প্রযুক্তির ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করেছে। তবে পড়ুয়াদের জন্য নিষিদ্ধ করে খোদ শিক্ষক যদি এর ব্যবহার শুরু করেন তা নিশ্চিতভাবেই লজ্জার বলে মনে করছে শিক্ষকমহল।
