রঙিন দিনে নিজেকে সামলে রেখে তবেই রং নিয়ে মাতামাতি করুন। না হলে ক্ষণিকের খুশি থেকে দেখা দিতে পারে অসুখ আশঙ্কা। সুমিত রায়-কে সতর্ক করলেন রুবি হাসপাতালের জেনারেল ফিজিশিয়ান ডা. তাপস রায়।
রঙের উৎসবে মাতোয়ারা ছোট থেকে বড়। বাজারে বাজারে রঙের বাহার। এখন থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে স্কুল-কলেজের প্রাঙ্গণে বসন্ত উৎসব। সব ভাল যদি রং ভাল হয় তবেই। আসলে এই রঙে বা আবিরে এখন কেমিক্যালই বেশি থাকে। যা রং খেলার আনন্দকে পুরো মাটি করে দিতে পারে। খারাপ রং আর রং খেলার সময় হুড়োহুড়ি, দুষ্টুমি খুশির দিনে ডেকে আনতে পারে বিপদ। তাই খুব সতর্ক হয়ে তবেই রং মাখুন।
কেনার আগে বুঝতে হবে
- রাসায়নিক বা কৃত্রিম রং এবং জৈব বা প্রাকৃতিক রঙের পার্থক্য বোঝা খুব একটা শক্ত ব্যাপার না।
- চকচকে এবং খুব গাঢ় বা উজ্জ্বল রং কখনওই প্রাকৃতিক রং নয়।
- যে রঙে চকচকে গুঁড়ো মেশানো থাকে ও একটু খরখরে প্রকৃতির সেটাও প্রাকৃতিক রং নয়।
- হাত দিলে যে রং খুব মোলায়েম, অনেকটা পাউডারের মতো মোলায়েম সেটা প্রাকৃতিক রং বুঝতে হবে।
বেরং চিনুন
বেশি উজ্জ্বল রং মানেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মারাত্মক রাসায়নিক দিয়ে তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক যেমন-
গাঢ় সবুজ- এতে কপার সালফেট থাকে, এবং এটা চোখে লাগলে অ্যালার্জি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাময়িকভাবে মানুষ কিছু দেখতে পায় না (টেম্পোরারি ব্লাইন্ডনেস)।
গাঢ় বেগুনি- এই রং ক্রোমিয়াম আয়োডাইড থেকে তৈরি হয় যার থেকে হাঁপানি বা অন্যান্য অ্যালার্জি হতে পারে।
রূপালি রং- অ্যালুমিনিয়াম ব্রোমাইড দিয়ে এই রং তৈরি হয়, যেটা ক্যানসার পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
কালো রং- এতে লেড অক্সাইড থাকে। কোনও কারণে মুখে চলে গেলে যা কিডনির সমস্যা ডেকে আনে এবং মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করতে পারে।
গাঢ় নীল- এই রঙে প্রুশিয়ান ব্লু থাকে, যা থেকে চর্মরোগ হতে পারে।
গাঢ় লাল- মার্কারি সালফেট দিয়ে তৈরি এই রং থেকে ত্বকের সমস্যার পাশাপশি ত্বকের ক্যানসার ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়া এই রাসায়নিক থেকে হতে পারে মিনামাটা ডিজিস (এই ক্ষেত্রে মানসিক রোগ, প্যারালাইসিস, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাওয়ার সমস্যা হয়)।
চকচকে রং- অনেক রঙে চকচকে কিছু জিনিস মেশানো থাকে। রঙের ঔজ্জ্বল্য দেখলেই কিনতে ইচ্ছা করে। এই চকচকে বস্তু আসলে কাচের পাউডার। তাই বোঝাই যাচ্ছে এই রং ত্বক বা চোখে লাগলে কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
[ জানেন, অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য দোলের রং কতটা ক্ষতিকারক? ]
রং মাখার আগে মনে করে
চেষ্টা করুন প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করেই রং খেলতে। নিজে সচেতন হলেই শুধু হবে না। বাকিদের থেকে সচেতন থাকাও জরুরি। তাই-
- চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব গা ঢাকা দেওয়া জামাকাপড় পরার। এতে একটু হলেও ত্বক খারাপ রঙের ক্ষতি থেকে বাঁচবে।
- সারা গায়ে ভেসলিন, ময়েশ্চারাইজার, নারকেল তেল, কোনও ক্রিম বা লোশন, অলিভ অয়েল মেখে নিন। এই প্রলেপ ত্বককে এই ক্ষতিকারক রসায়নগুলি থেকে বাঁচাবে।
- সানগ্লাস বা পাওয়ার ছাড়া সাধারণ চশমা পড়ে নিন যাতে চোখে রং না ঢুকতে পারে। কনট্যাক্ট লেন্স পরে রং খেলা একদম নয়।
- যখন কেউ রং মাখাবে সঙ্গে সঙ্গে মুখটা বন্ধ করে নিন যাতে মুখের ভিতরে কোনও রং না ঢোকে।
- হোলির আগের দিন রাতে চুলে হালকা তেল মাখা থাকলে ভাল। পরের দিন রং মাখার আগে আরেকবার তেল লাগিয়ে নিন, যাতে চুল এবং স্কাল্পে ওই রাসায়নিক পদার্থগুলির কুপ্রভাব কম পড়ে। পারলে টুপি বা মাথায় ওড়না বেঁধে রং মাখুন।
- এই বিশেষ দিনে খাবারের ব্যাপারে কারও উপর বিশ্বাস না করাই ভাল। পানীয় বা যে কোনও খাবারে ভাং জাতীয় কিছু কেউ মিশিয়ে দিলেই বিপদ। সামলানো মুশকিল।
খেলার পর
রং মাখার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘরে ফিরে পরিষ্কার হন-
- স্নানের জন্য হালকা গরম জল ব্যবহার করুন।
- রং ওঠাতে বেশি করে সাবান বা শ্যাম্পু মাখলে লাভ হবে না বরং ক্ষতি বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই সাবান দিন। ধীরে ধীরে রং চলে যাবে।
- ঘাড়ের রং তোলার জন্য আগে নারকেল তেল, লেবু বা বেসন দুধ দিয়ে মেখে নিন। গায়ে এবং চুলে আগে মাখুন তারপর সাবান দিয়ে স্নান করুন।
- চোখ জ্বালা বা চুলকানি যদি কয়েক ঘণ্টার বেশি হয় তবে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- ত্বকে যদি কোনওরকম ফুসকুড়ি, জ্বালা বা চুলকানি হতে থাকে তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
পরামর্শ : ৯৮৩০৪৫৭৪৪৪
[ চুলচেরা চিড় অচিরেই ডেকে আনতে পারে বিপদ ]
The post বেশি উজ্জ্বল রং মানেই ত্বকের ক্ষতি, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? appeared first on Sangbad Pratidin.