অর্ণব আইচ: ট্যাক্সির ভিতর কাপড়ের গাঁটরি খুলতেই বেরিয়ে পড়ে এক যুবকের ক্ষতবিক্ষত দেহ। দেখেই আঁতকে চিৎকার করে ওঠেন ট্যাক্সিচালক। শুক্রবার দক্ষিণ শহরতলির ঠাকুরপুকুরে ঘটে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য রহস্য উদঘাটন হয়। দুর্ঘটনার দু’দিন পর ভাইয়ের মৃত্যু। তাই ভাইয়ের দেহ কাপড়ের গাঁটরির মধ্যে পুরে মাকে দেখানোর জন্য ট্যাক্সি করে ধর্মতলা থেকে ঠাকুরপুকুরে নিয়ে গিয়েছিলেন দাদা।
ট্যাক্সিচালকও জানতেন না যে, কাপড়ের গাঁটরির মধ্যে রয়েছে আস্ত একটি দেহ। ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করার পর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ওই যুবকের নাম কৃষ্ণ মণ্ডল। তাঁর দাদার নাম নারায়ণ মণ্ডল। ধর্মতলার কাছে নিউ মার্কেট থানা এলাকার লিন্ডসে স্ট্রিটে খেলনা বিক্রি করেন নারায়ণ। কৃষ্ণ ও নারায়ণের বাবা হরেন মণ্ডলের মৃত্যুর পর মা গিরিবালা মণ্ডল আশিস ঘোষাল নামে একজনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর গিরিবালার নাম হয় সরস্বতী ঘোষাল। তাই দুই ছেলের পদবীও পালটে ঘোষাল হয়। তাঁদের আসল বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কালীতলা এলাকার কলাগাছিয়ায়। সরস্বতী ঠাকুরপুকুর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় পরিচারিকার কাজ করতেন। কৃষ্ণ বিশেষ কোনও কাজ করতেন না।
[আরও পড়ুন: ‘মানুষকে বিশ্বাস করাতে পারিনি আমরা জিততে পারি’, বিধানসভায় হার নিয়ে স্বীকারোক্তি দিলীপের]
গত বুধবার ময়দান এলাকায় রেড রোডে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি গাড়ি কৃষ্ণকে ধাক্কা দেয়। পুলিশ তাঁকে SSKM হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসার পর তাঁর কোমর ও বাঁ হাতে ব্যান্ডেজ হয়। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর কৃষ্ণ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন। দুর্ঘটনার ফলে তাঁর শরীরের পিছন, কোমর, হাত, বুক, মুখ ও মাথায় আঘাতও লাগে। ওই অবস্থায় তিনি কোনওমতে পার্ক সার্কাসে যান। ফুটপাথেই পড়ে ছিলেন। এই খবর দাদা নারায়ণের কাছে আসে। দাদা নারায়ণ লিন্ডসে স্ট্রিটেই ফুটপাথে থাকেন। বৃহস্পতিবার তিনি পার্ক সার্কাস থেকে ভাইকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর ভাইয়ের খাওয়া জোটেনি। আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন দুর্ঘটনাগ্রস্ত যুবক। শুশ্রূষা করা সত্ত্বেও শুক্রবার সকাল সাতটা নাগাদ মৃত্যু হয় ভাই কৃষ্ণর।
নারায়ণ পুলিশ বা অন্য কাউকে ঘটনাটি না জানিয়ে ভাইয়ের দেহটি মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। প্রথমে ট্যাক্সিতে দেহটি তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু পর পর গোটা চারেক ট্যাক্সির চালক নিজেদের গাড়িতে দেহটি নিতে রাজি হননি। তাই নারায়ণ ভাইয়ের দেহটি কাপড়ে মুড়ে ফেলেন। এক ট্যাক্সিচালককে বলেন, কাপড়ের গাঁটরি ঠাকুরপুকুরে নিয়ে যেতে হবে। তাতে আপত্তি করেননি চালক।
ঠাকুরপুকুরে পৌঁছে মাকে ডেকে আনেন। মায়ের সামনে কাপড়ের গাঁটরি খুলে ভাইয়ের দেহটি বের করেই কেঁদে ফেলেন নারায়ণ। এই দৃশ্য দেখে চালক আঁতকে ওঠেন। এতক্ষণ গাড়িতে দেহ নিয়ে আসছিলেন, তা ভাবতেও পারেননি। তাঁর চিৎকার শুনেই এলাকার বাসিন্দারা পুলিশকে খবর দেন। ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ দেহটি উদ্ধার করেন। দুর্ঘটনায় যুবকের মৃত্যুর প্রমাণ মিললেও ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।