অর্ণব আইচ: দাঙ্গাবিধ্বস্ত মণিপুরে খতম ৪০ জঙ্গি। চলছে জোর লড়াই। এমনটাই জানিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং।
রবিবার সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিগত আট ঘণ্টা ধরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে মণিপুর পুলিশের কমান্ডো বাহিনী। এখনও পর্যন্ত নিহত হয়েছে অন্তত চল্লিশ জন সন্ত্রাসবাদী। বীরেন সিং বলেন, “সাধারণ নাগরিকদের নিশানা করছিল জঙ্গিরা। তারা এম-১৫ ও একে-৪৭ রাইফেলের মতো মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করছে। সেনাবাহিনী ও অন্য নিরাপত্তা সংস্থার সাহায্যে আমরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
সূত্রের খবর, ইম্ফল উপত্যকার কাছে বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সেকমাই, সুগনু, কুম্বি, ফায়েং, সেরৌতে শনিবার রাত ২টো থেকে চলছে হামলা। এখনও লড়াই শেষ হয়নি। আগামিকাল মণিপুরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই মুহুর্তে পাহাড়ি রাজ্যটিতে ‘পিস মিশনে’ রয়েছেন কেন্ত্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই।
[আরও পড়ুন: দাক্ষিণাত্যের চাবিকাঠি ধর্মদণ্ড ‘সেঙ্গল’! নতুন সংসদ ভবনে তামিল অস্মিতার বার্তা মোদির
উল্লেখ্য, থেকে থেকেই জ্বলে উঠছে মণিপুর। কিছুতেই নিভছে না জাতি দাঙ্গার আগুন। পরিস্থিতি জটিল করে হিংসায় ইন্ধন জোগাচ্ছে পাহাড়ের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গতকাল থেকেই অভিযান শুরু করেছে অসম রাইফেলস ও সেনাবাহিনী। সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু ও ইম্ফল উপত্যকা ঘিরে রাখা পাহাড়গুলিতে অভিযান শুরু করেছে অসম রাইফেলস ও সেনাবাহিনী। গভীর জঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকা কুকি ও নাগা সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির বিরুদ্ধেই এই অভিযান।
সূত্রের খবর, জাতি দাঙ্গায় ইন্ধন জোগাচ্ছে ইউনাইটেড পিপলস ফ্রন্ট (UPA) ও কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (KNO) মতো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি। পাহাড়ে মেতেইদের উপর হামলা চালাচ্ছে তারা। শনিবার থেকেই সেনাপতি জেলার মতবুং, সদর হিল অটোনোমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিলের সাইকুল, পুখাও ও সাংগলমাং এলাকায় অভিযান শুরু করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
[আরও পড়ুন: নতুন সংসদের উদ্বোধনের দিনই ভূলুণ্ঠিত দেশের গর্ব, এই কি প্রাপ্য ছিল সাক্ষী-ভিনেশদের?]
উল্লেখ্য, মণিপুরে ট্রাইবাল বা আদিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই নতুন কিছু নয়। কয়েকশো বছর ধরে তা চলছে। তবে এবার তা ভিন্ন মাত্রা ধারণ করেছে। বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেতেইরা তফসিলি উপজাতির তকমা দাবি করে বারুদের স্তূপে আগুন দিয়েছে।গত এপ্রিল মাসে রাজ্য সরকারকে মেতেইদের দাবি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। তাই রাজ্য ও কেন্দ্রকে প্রতিবাদী বার্তা দিতেই ৩ মে ‘ট্রাইবাল সলিডারিটি মার্চ’ শুরু করে ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’। মেতেইদের তফসিলি উপজাতির তকমা না দেওয়ার দাবিতেই ছিল এই মিছিল। ক্রমেই তা হিংসাত্মক আকার ধারণ করে। মেতেই সংখ্যাগুরু ইম্ফল উপত্যকায় বেশকিছু বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর এর প্রতিক্রিয়াও হয় প্রায় সঙ্গে সঙ্গে। গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে হিংসা।