স্টাফ রিপোর্টার: আশি কিলোমিটারের চেয়ে বেশি বেগে হাওয়া বয়ে গিয়েছে। ৫ মিনিটে এই হাওয়ার তাণ্ডবে উপড়ে গিয়েছে শহরের ৪৪টি গাছ। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, প্রবল হাওয়ার তাণ্ডবে কিছু গাছ শিকড় আলগা হয়ে বিপজ্জনকভাবে হেলে পড়েছিল। রাতের দিকে সেগুলি ভেঙে পড়ে রাজপথে। কীভাবে এত গাছ পড়ল তা খতিয়ে দেখছে পুরসভা।
যদিও পুরসভার অন্দরের খবর, যে গতিবেগে হাওয়া বয়ে গিয়েছে, তাতে গাছ পড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনটাই মত উদ্ভিদবিদদেরও। শহরের উদ্ভিদবিদরা জানিয়েছেন, কলকাতার মাটির গভীরতা কম। একটু নিচেই রয়েছে একাধিক ক্যানাল। ফলে বড় গাছের প্রধান মূল বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। পেল্লায় ঝাঁকড়া মাথা দ্রুত গতির হাওয়ার সামনে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। ঝড়ের ক্ষতি মেটাতে নতুন করে গাছ লাগানোর দিকে জোর দিচ্ছে পুরসভা। উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ২২ মে যে কালবৈশাখী হয়েছিল তার গতিবেগ ছিল ৯০ কিলোমিটারের আশপাশে। সেবারও ৩০টির উপর গাছ পড়েছিল শহরে।
[আরও পড়ুন: দিল্লির আফগান দূতাবাসে জোর করে ঢোকার চেষ্টা তালিবান ‘কূটনীতিকে’র, রুখে দিল কর্মীরাই!]
পুরসভার আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গাছকে তরতাজা রাখাই এখন মূল উদ্দেশ্য। গোড়া শক্ত রাখতে এই মুহূর্তে ১২টি জেট পাম্প দিয়ে কলকাতার গাছে জল দেওয়া হচ্ছে। ১৪৪টি ওয়ার্ডে দ্রুত সেই জেটপাম্পের সংখ্যা আরও বাড়ানোর কথা ভাবছে পুরসভা। এছাড়াও এমন গাছ লাগানোর পরিকল্পনা চলছে যার গোড়া শক্ত। হাওয়ার তোড়ে সহজে ভেঙে পড়বে না। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, গোটা শহর জুড়েই গাছ লাগানোর পরিকল্পনা চলছে। এমন বিধ্বংসী ঝড়ের বিরুদ্ধে পুরসভার জবাব নাগরিক বনাঞ্চল। অর্থাৎ কলকাতা পুর এলাকায় যেখানেই ফাঁকা জমি পাওয়া যাবে সেখানেই গাছ লাগানো হবে। বড় গাছের বদলে নানাবিধ গুল্ম ছোট প্রজাতির গাছই পুরসভার প্রথম পছন্দ। ভয়াল ঝড়েও যা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। কেন এত গাছ পড়ছে শহরে?
বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রাক্তন গবেষক ড. আক্রামল হক জানিয়েছেন, একাধিক কারণে গাছ পড়ছে কলকাতায়। শহরে মাটির গভীরতা কম। নিচে রয়েছে ক্যানাল। ফলে প্রধান মূল বেশি নিচে যেতে পারে না। অন্যদিকে রাস্তা দিয়ে বড় বড় গাড়ি যায় আখছার। অতিরিক্ত কম্পনের কারণে সেদিকেও এগোতে পারে না পেল্লায় বৃক্ষের প্রধান মূল। ফলে মাথা ভারী হয়ে গেলেও মাটির সঙ্গে নিজেকে আঁকড়ে ধরে রাখার ক্ষমতা ক্রমশ কমে। একটা কালবৈখাশীতেই ঝড়ে পড়ে অগুনতি।
[আরও পড়ুন: ৬ নয়, এবার থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি হোক ৯ মাসের, প্রস্তাব নীতি আয়োগের]
উদ্ভিদবিদরা বলছেন, কল্কে, কামিনী, বকুল জাতীয় মাঝারি উচ্চতার গাছ লাগালে এমনটা হওয়ার আশঙ্কা কম। উচ্চতা তূলনামূলক কম হওয়ায় শিকড়ের উপর যথেষ্ট চাপ পড়ে না। ইতিমধ্যেই বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, এস এন ব্যানার্জি রোডে এমন গাছ লাগিয়েছে পুরসভা। এক হাজার চারাগাছ লাগানো হয়েছে বিটি রোড, পাইকপাড়া, দমদম রোডে। বিধাননগর, বাগমারি রোড, নারকেলডাঙা এলাকাতেও লাগানো হয়েছে এক হাজার চারাগাছ। সাধারণত জুন, জুলাই, আগস্ট মাসে নতুন চারা রোপণ করে পুরসভা। আসন্ন জুন-জুলাই নতুন করে শহরজুড়ে প্রায় পাঁচ হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নিয়েছে পুরসভা।