অর্ণব আইচ: পোস্ট অফিসের (Post Office) ভুয়ো অ্যাকাউন্টে টাকা লেনদেন। প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার সাসপেন্ড হওয়া এক পোস্ট মাস্টার। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের উপর একটি গেস্ট হাউজে নাম ভাঁড়িয়ে লুকিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার অভিযুক্ত।
পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর কলকাতার সিঁথি পোস্ট অফিসে ঘটেছে এই ঘটনাটি। ২০০৪ সালের আগে পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টের হিসাব খাতায় রাখা হত। ওই বছর থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হিসাব রাখা শুরু হয়। ২০১৮ সালে ‘ফিনাকল’ নামে একটি সফটওয়্যার ব্যবহার শুরু হয়। পোস্ট অফিসের অ্যাকাউন্টের যাবতীয় হিসাব ওই সেখানেই রাখা হত। কয়েক বছর আগে উত্তর কলকাতার সিঁথি পোস্ট অফিসে পোস্ট মাস্টার হিসাবে যোগ দেন কৌশিক পাল। তিনি অ্যাকাউন্টগুলি পরীক্ষা করতে গিয়ে জানতে পারেন যে, ৮৩ জন গ্রাহকের ৫৪২টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেগুলি থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। খাতায় সেগুলির লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও ত্রুটির কারণে সফটওয়্যার থেকে সেগুলি মুছে দেওয়া হয়নি।
[আরও পড়ুন: পুরনো সম্পর্কে আর ফিরতে না চাওয়ার ‘শাস্তি’, বধূকে ‘ধর্ষণ’ প্রাক্তন প্রেমিকের]
ত্রুটির বিষয়টি ডাকবিভাগকে জানানোর বদলে জালিয়াতির ছক কষেন পোস্ট মাস্টার কৌশিক। একেকটি অ্যাকাউন্টে গড়ে এক লক্ষ টাকা যাতে সরকার পাঠায়, সেই ব্যবস্থা করেন ওই ব্যক্তি। এবার পোস্ট অফিসের গ্রাহকের নামে ৩২টি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলেন। ক্রমে ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে আসতে থাকে টাকা। গ্রাহকদের জাল সই করে পোস্ট মাস্টার সেই টাকা তুলতে শুরু করেন। মোট ৫ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা তুলে ব্যাংকের একাধিক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা পাঠাতে থাকেন। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ডাকবিভাগে অডিট করার সময় এই দুর্নীতি সামনে আসে। তখনই কৌশিক পালকে ডেকে কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করেন। কিন্তু কৌশিক সদুত্তর দিতে পারেননি। এরপরই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে সিঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তারই ভিত্তিতে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত শুরু করে। পুলিশ নদিয়ার ধুবুলিয়া ও বাগুইআটির দেশবন্ধুনগরের দু’টি বাড়িতেই হানা দেয়। কিন্তু বেগতিক বুঝে বাড়ি থেকে পালান তিনি। তাঁর মোবাইল ও এটিএমের সূত্র ধরে চলে তদন্ত। বারাকপুর কমিশনারেটের জেটিয়া থানা এলাকার কাচরাপাড়ায় কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের একটি গেস্ট হাউজে গা ঢাকা দেন কৌশিক পাল। সোমবার সকালে অবশেষে তাঁকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ওই পোস্ট মাস্টারের সঙ্গে পোস্ট অফিসেরই আরও কেউ যুক্ত রয়েছেন কি না, তা জানতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।