অভিরূপ দাস: গলা জড়াজড়ি করে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল দুজনে। এক নাক, একই রকম মুখ। চোখের পাতাটাও। আলাদা করার কোনও উপায়ই নেই। একজনকে কোলে নিতে চাইলে অন্যজনও চলে আসছে। হৃদয়ও (Heart) যে একটাই। এ যেন ‘দো জিসম এক জান’। হিন্দি সিনেমার সংলাপ।
এই ধরনের বিশেষ শিশুকে বলা হয় থোরাকোফেগাস। তবে এক্ষেত্রে তা আরও বিরলতম। ‘থোরাকো ওমো হ্যালোপেগাস।’ অর্থাৎ সদ্যোজাত দুই বোনের যকৃৎ (Liver) একটা থাকলেও পাকস্থলী আলাদা। পঞ্চাশ হাজারে একজন এমন বিরল যমজের (Twin) জন্ম হতে পারে। আদতে যাদের শরীর দুটো একে অপরের সঙ্গে জোড়া। থোরাকোফেগাস কথার অর্থ থ্রোক্স বা বুকের সঙ্গে বুক লাগানো। সাধারণত দুটো শরীরে একটা হৃদয় হওয়ায় তার গঠনগত অনেক ত্রুটি থাকে। নীলরতন সরকার (NRS) মেডিক্যাল কলেজের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. কৌশিক সাহার কথায়, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এদের হৃদয়ের অলিন্দ এবং নিলয়ের মাঝে পর্দাটি নেই। এই দুটি বাচ্চারও হৃদপিণ্ডের গঠন অস্বাভাবিক ছিল। ফুসফুস থেকে হার্টে পরিশুদ্ধ রক্ত আসে। দুটি শরীরে একটিমাত্র হৃদপিণ্ড হওয়ার দরুন পরিশুদ্ধ রক্তে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। ডা. সাহার কথায়, এসব ক্ষেত্রে একটি বাচ্চা মারা গেলে এক মিনিটের মধ্যে অন্য বাচ্চাটিও মারা যায়।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসুন গিরি জানিয়েছেন, ভূমিষ্ঠ হওয়া জোড়া শিশু বাঁচতে পারে যদি তাদের আলাদা-আলাদা অঙ্গ থাকে। সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সহজে আলাদা করা যায়। কিন্তু একই হৃদয় নিয়ে দুটো শিশু জন্মালে বাঁচার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। ডা. গিরির ব্যাখ্যা, “একই হৃদপিণ্ড নিয়ে দুটো শিশু ভূমিষ্ঠ হলে ঘনঘন তাদের হৃদপিণ্ডে সংক্রমণ হয়। সিংহভাগ ক্ষেত্রে সেই সংক্রমণ এতই প্রগাঢ় যে শিশুদুটিরই মৃত্যু হয়।” এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। ২৮ জুলাই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভূমিষ্ঠ হওয়া দুটি শিশু বেঁচেছিল মাত্র ২৪ ঘণ্টা। ২৯ জুলাই বুধবার দুই শিশুর এক হৃদয়ের স্পন্দন থেমে গিয়েছে। তবে তাতে কষ্ট পাননি মা-বাবা। তাঁদের কথায়, বেঁচে থাকলে ওরা কষ্ট পেত। এভাবে একটা হৃদয় নিয়ে কষ্ট পেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ওরা মুক্তি পেয়েছে।
[আরও পড়ুন : হাসপাতালে ঘুরেও অমিল চিকিৎসা! অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু করোনা আক্রান্ত অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের]
উত্তর ২৪ পরগনার মিলনবাজার কৃষ্ণপুর এলাকায় বাড়ি শিশুটির অভিভাবকদের। দিন পাঁচেক আগেই প্রসূতি ভর্তি হয়েছিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ডা. অসীমকুমার মল্লিক জানিয়েছেন, লোয়ার ইউটেরাইন সেগমেন্ট সিজারিয়ান সেকশনে ভরতি করা হয়েছিল প্রসূতিকে। অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন ডা. বিলকিস, ডা. দেবাশিস, ডা. সোমাশ্রী। সিজারিয়ান সার্জারিতে জোড়া সন্তানের মা হন ওই প্রসূতি। ডা. মল্লিক জানিয়েছেন, এই ক্ষেত্রে ভূমিষ্ঠ যমজ ছিল থোরাকো ওমো হ্যালোপেগাস। অর্থাৎ এদের যকৃৎ একটা থাকলেও পাকস্থলী আলাদা। এমন শিশুদের শরীরে একই ক্রোমোজোমের গঠন দেখা যায়।
[আরও পড়ুন : মেডিক্যালে পিপিই পরা ‘চোর’, করোনা আক্রান্তের গয়না চুরির চেষ্টা করে আটক হাসপাতালেরই কর্মী]
The post অভিন্ন হৃদয় নিয়ে জন্ম, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিরবিদায় কলকাতার ‘সীতা-গীতা’র appeared first on Sangbad Pratidin.