ধীমান রায়, কাটোয়া: মাসখানেক আগে স্বামীর কাছে গিয়েছিলেন। রবিবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু স্বামীকে ছেড়ে আসতে মন চায়নি। তাই একটা দিন অতিরিক্ত স্বামীর কাছে কাটিয়ে সোমবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেন ধরেছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা শহরের বাসিন্দা বিউটি বেগম শেখ। সেটাই কাল হল। অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল গুসকরার বধূর।
গুসকরা শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাচাঁদার বাসিন্দা হাসমত শেখ। আগে গুসকরা পুরসভার ঠিকাশ্রমিকের কাজ করতেন। বছর তিনেক আগে শিলিগুড়িতে একটি বেকারি কারখানায় কাজে যোগ দেন। সেখানেই কোম্পানির অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে ভাড়াঘরে থাকেন। হাসমত শেখ ও বিউটি বেগম শেখের এক ছেলে বিশাল শেখ কেরালায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এক মেয়ে সুইটি খাতুনের মাসখানেক আগে বীরভূমে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। হাসমত শেখের বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা। হাসমত শেখ জানিয়েছেন, তিনি মেয়ের বিয়ের সময় ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। তার পর স্বামী-স্ত্রী দুজনেই শিলিগুড়ি ফেরেন। স্বামীর কর্মস্থলে একমাস কাটানোর পর এদিন বিউটি বেগম শেখ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে চেপে গুসকরায় ফিরছিলেন।
[আরও পড়ুন: জীতু গোয়েন্দার ‘অরণ্য’র প্রাচীন প্রবাদ’, সঙ্গী শিলাজিৎ-মিথিলারা, ট্রেলারে ঘনাল রহস্য]
হাসমত শেখ বলেন, "আমার ডিউটি ধরার কথা ছিল। তাই স্ত্রীকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌছে দিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে পারিনি। চারটে কলা, দুই প্যাকেট বিস্কুট সঙ্গে আরও কিছু ফল স্ত্রীকে কিনে দিয়ে আসি। তার পর ডিউটিতে চলে যাই।" তিনি আরও বলেন, "আমি কারখানায় থাকার সময়েই ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পাই। তখন শুনি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে গুরুত্ব দিইনি। কারণ আমার স্ত্রী হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস চেপেছিল বলেই ভেবেছিলাম। কিছুক্ষণ পর স্ত্রীকে ফোন করি। যোগাযোগ করতে না পেরে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে যাই। তখন অনেক লোকজন। হাসপাতালে এসে স্ত্রীর ছবি দেখাই। এর পর পুলিশ মৃতদেহগুলির কাছে নিয়ে যায়। তখনই দেখি আমার স্ত্রী আর নেই। শোয়ানো রয়েছে দেহটা।"
স্বামী হাসমত শেখের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "আমি ভাবতেই পারিনি আমার এই সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। আমি শিলিগুড়ি থেকে এসে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিলাম। হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস না থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘায় চেপেছিলেন।" এদিন দুর্ঘটনার খবর গুসকরায় আসতেই ইটাচাঁদার বাসিন্দাদের মধ্যেও শোকের ছায়া। গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, "এটা খুব মর্মান্তিক ঘটনা। ওই পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।"