বিপ্লবচন্দ্র দত্তে, কৃষ্ণনগর: মুরগি চোর সন্দেহে ১৮ বছরের যুবককে ঘরের মধ্যে হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ। সেই সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলল মারধর ও অমানুষিক অত্যাচার। যার জেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল যুবক। মৃতের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, মারধরের পর ওই তরুণের মলদ্বারে স্ক্রু ড্রাইভার ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তীর মৃত ওই তরুণের দাদার বাড়ির মালিকের দিকে। ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার (Nadia) চাকদহ পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পিকনিক গার্ডেনের কাছে ১ নম্বর ঠাকুর কলোনি এলাকায়। বুধবার রাতে চাকদহ থানায় এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই তরুনের নাম রাহুল সিং(১৮)। চাকদহ পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল বয়েজ হাইস্কুলের কাছে কেবিএম এলাকার বাসিন্দা তিনি। রাহুলরা দুই ভাই ও চার বোন। ভাইদের মধ্যে রাহুল ছোট। রাহুলের দাদা রোহিত সিং চাকদহ পিকনিক গার্ডেনের কাছে ১ নম্বর ঠাকুর কলোনি এলাকায় অনিল বর্মন নামে একজনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সেই বাড়িতে থাকতেন রোহিত সিংয়ের স্ত্রী, সন্তান। গত সাত-আট মাস ধরে সেখানে থাকত ছোট ভাই রাহুল। কেবিএমের বাড়িতে রাহুলের বাবা, মা ও বোনেরা থাকেন। রোহিত কাঁচরাপাড়ায় একটি ঠিকাদারি সংস্থায় কাজ করতেন। ইদানিং তিনি তার ভাইকে নিজের কাছে নিয়ে এসে ভাইয়ের কাজের সন্ধান করছিলেন।
[আরও পড়ুন: রাজ্যে ফের একদিনে করোনা আক্রান্ত একশোর কম, হোলি উপলক্ষে কোভিডবিধিতে ছাড়]
কয়েকদিন আগে তার বাড়ির মালিক অনিল বর্মনের একটি মুরগি চুরি যায়। রোহিত সিং বলেন, “সেই মুরগি আমার ভাই চুরি করেছে, সেই সন্দেহে অনিল বর্মন বুধবার ভোরে তিনতলার ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে তাঁর হাত-পা পিছন দিক দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে চরম অত্যাচার করে। ভাইয়ের মলদ্বারে স্ক্রু-ডাইভার হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর হাতুড়ি দিয়ে আমার ভাইকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। বুধবার বেলার দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমার ভাইকে চাকদহ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। যদিও হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। অথচ আমার ভাই কোনও চুরি করেনি। আমি বুধবার রাতে অনিল বর্মনের বিরুদ্ধে আমার ভাইকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা চাই ভাইকে যেভাবে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে, তার জন্য অনিল বর্মনকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক।”
মৃত ওই তরুণের মা টুম্পা সিংহ, বৌদি খুশি সিংহ সকলেই দোষী ব্যক্তির কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ, অমানুষিক অত্যাচার করে রাহুলকে মারা হয়েছে। পুলিশ যেন অনিল বর্মনকে কঠোর শাস্তি দেয়। যদিও মারধর ও অমানুষিক অত্যাচারের জন্যই এই তরুণের মৃত্যু হয়েছে কী না, তা বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি পুলিশের কাছে। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত নিয়ে হতে পুলিশ এখন ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও পুলিশের ওই আধিকারিক জানিয়েছেন, “মৃতের পরিবারের লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের কেস রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অভিযুক্তের খোঁজে চালানো হচ্ছে জোর তল্লাশি।”