মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য: ওড়িশা এফসির (Odisha FC) বিরুদ্ধে ছ’গোল খেয়ে এ বারের আইএসএল শেষ করল আমার প্রিয় ক্লাব। সেই ম্যাচের পর চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না এসসি ইস্টবেঙ্গল (SC East Bengal) ঠিক এমন অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ করল। তবে ওড়িশা ম্যাচটা বাদ দিলে লাল হলুদের বাকি ISL সফরটাও কোনও বিপর্যয়ের থেকে কম কিছু ছিল না। ২০টা ম্যাচ খেলে মাত্র তিনটে জিতেছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। এই একটা পরিসংখ্যান থেকেই তো পরিষ্কার আইএসএলে ঠিক কতটা নিষ্প্রভ ছিল লাল হলুদ। এসসি ইস্টবেঙ্গল মানেই তো এমন একটা ক্লাব যারা প্রতিটা পরিস্থিতিতেই লড়াই করে। কিন্তু এ বারের আইএসএলে কোনও লড়াই—টড়াই কিছুই দেখতে পেলাম না। লাল হলুদের এমন দুঃস্বপ্নের আইএসএল অভিযানের পিছনে মূলত চারটে কারণ খুঁজে পাচ্ছি। আর তাতে সবচেয়ে প্রথমেই থাকবেন দলের কোচ।
ফাউলারের স্ট্র্যাটেজি: প্রতিটা কোচেরই নিজস্ব একটা পদ্ধতি থাকে। কোনও কোনও কোচ ডিফেন্স বা আক্রমণের মধ্যে ব্যালান্স রাখতে পছন্দ করেন। কেউ আবার দলকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলাতে ভালবাসেন। তবে গোটা মরশুম এসসি ইস্টবেঙ্গলকে দেখে বুঝলাম না রবি ফাউলারের স্ট্র্যাটেজি কী ছিল? প্রথমদিকে দেখলাম পাসিং ফুটবল খেলছে লাল হলুদ। মরশুম যত এগোতে থাকল তত বেশি ডিফেন্সিভ হয়ে গেল এসসি ইস্টবেঙ্গল। ফলে দলের কোনও ট্রেডমার্ক প্লেয়িং স্টাইলই দেখতে পেলাম না। আসলে ফাউলার বুঝেই উঠতে পারেননি তাঁর দলের আদর্শ প্লেয়িং স্টাইল কী। তার উপর আবার ফাউলারের কোনও প্ল্যান বি—ও ছিল না। লাল হলুদের ফুটবলাররা একই ভুল বারবার করে গেল। আমার মতে তাই পরের মরশুমে ফাউলারকে কোচ রাখলে হবে না।
[আরও পড়ুন: মোতেরার পিচ নিয়ে বিতর্কিত টুইট ভনের, ইংল্যান্ডের কোচকে তুলোধোনা করলেন পিটারসেন]
নিষ্প্রভ বিদেশিরা: অনেক বিশেষজ্ঞই দেখলাম লাল হলুদের ভারতীয় ফুটবলারদের কটাক্ষ করেছিল। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল দলের বিদেশি ফুটবলাররাও বা কী এমন আহামরি পারফর্ম করেছে। পরিষ্কার বলছি বিদেশি ফুটবলাররা কোনও ইম্প্যাক্টই করতে পারেনি। একমাত্র ব্রাইট এনোবাখারেই যা দুর্দান্ত কিছু পারফরম্যান্স উপহার দিল। অ্যান্থনি পিলকিংটন এত বড়মাপের ফুটবলার। প্রিমিয়ার লিগে চুটিয়ে খেলেছে। ড্যানি ফক্সের সিভিও দারুণ। কিন্তু ফক্স—পিলকিংটনরা কেউ কিছুই করতে পারল না। পরের মরশুমে তাই অর্ধেক বিদেশিদের পাল্টাতে হবে। কিন্তু ব্রাইটের মতো প্রতিভাকে ছাড়া উচিত নয়।
ফিটনেসের অভাব: আইএসএল কিন্তু আই লিগ নয়। এই লিগে গতি দিয়ে ফুটবলটা খেলা হয়। তাই ফুটবলারদের চূড়ান্ত ফিট থাকতেই হয়। তবে আইএসএলের আগে খুব বেশিদিন প্রস্তুতির সময় পায়নি লাল হলুদ। তার উপর লকডাউনের জন্য অনেক ফুটবলারই বহুদিন বাদে ফুটবল মাঠে নেমেছিল। ফলে এসসি ইস্টবেঙ্গলকে দেখে মনে হচ্ছিল দলটা ফিটনেসের অভাবে ভুগছে। অনেক ম্যাচেই দেখছিলাম দ্বিতীয়ার্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে লাল হলুদ ফুটবলাররা। আর ফুটবলাররা একশো শতাংশ ফিট না হলে আইএসএলে দারুণ কিছু করা মুশকিল।
নিষ্প্রভ টিমগেম: এটিকে মোহনবাগান যেমন একটা ইউনিট হিসাবে খেলেছে। এসসি ইস্টবেঙ্গলের সেই টিমগেমই দেখতে পেলাম না। কোনও সময় মনে হয়নি দলটার মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে। কয়েকটা ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করেছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে লাল হলুদ দলটাকে মনে হচ্ছিল ছন্নছাড়া একটা টিম। যারা কেউ কাউকে চেনে না।