সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: চলতি শীতের মরশুম পর্যন্ত পুরুলিয়ার পর্যটন কেন্দ্র অযোধ্যা পাহাড়কে প্লাস্টিক ফ্রি জোন করতে চায় প্রশাসন। এই বিষয় নিয়ে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন বিভিন্ন দপ্তর ও হোটেল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেই সঙ্গে এই জেলার পর্যটনের আরও প্রসারে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বৈঠকে মূলত চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। অযোধ্যা পাহাড়ের বিভিন্ন পর্যটনস্থলে শৌচাগার না থাকায় পর্যটকদের ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। সম্প্রতি হোমস্টে কর্তৃপক্ষ তা প্রশাসনের নজরে আনে। এর পরেই এই বিষয়টিতে নড়েচড়ে বসেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। ওই বৈঠকে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন বনদপ্তরকে জানায়, প্রত্যেকটি পর্যটনস্থলে তারা যাতে শৌচালয় গড়তে পারেন সেই জন্য বনদপ্তরকে পদক্ষেপ করতে হবে। না হলে বনদপ্তর ওই পর্যটনস্থলগুলিতে শৌচালয় গড়ে দিক। প্রশাসনের এই বক্তব্যে বনদপ্তর জানায়, এ বিষয়ে তারা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) তথা জেলার পর্যটনের দায়িত্বে থাকা রাজেশ রাঠোর বলেন, "পর্যটনের প্রসারে বৈঠক হয়েছে। আমরা বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। "
পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন একটি সমীক্ষায় দেখেছে, গত বছর নভেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ফি মাসে ৭০ হাজার করে এই জেলায় পর্যটক পা রেখেছেন। পর্যটনে দার্জিলিং-র পরেই পুরুলিয়ার নাম উঠে আসছে। সুন্দরী অযোধ্যা পাহাড়কে তুলে ধরার পিছনে যেমন প্রশাসনের অবদান রয়েছে। তেমনই পর্যটন দপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে কুশল পল্লির বেসরকারি বিনিয়োগ শুধু পুরুলিয়া নয়, বাংলার পর্যটন মানচিত্রে একটা বড়সড় জায়গা করে নিয়েছে। এই পাহাড়ে দেশ-বিদেশের পর্যটক আসার অন্যতম কারণ হল অযোধ্যা ও মাঠার পরিবেশবান্ধব পর্যটন প্রকল্প। সেই কথা মাথায় রেখেই এই পাহাড়কে প্লাস্টিক ফ্রি জোন ঘোষণা করতে চাইছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। অতীতেও এই কাজ শুরু করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তা সফল হয়নি। পাহাড় ও পাহাড়তলিতে যে সকল পিকনিক পার্টি আসে। তারা যাতে থার্মোকল, প্লাস্টিক ব্যবহার না করেন সেজন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের হাতে তৈরি শালপাতার থালা দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু তা সেভাবে কার্যকর হয়নি। একই অবস্থা গড় পঞ্চকোটের ক্ষেত্রেও। সেখানেও প্লাস্টিক ফ্রি জোন করার ঘোষণা করেও সফল হয়নি।
[আরও পডুন: কফি হাউসের আড্ডায় টানা ২৬ হাজার দিন! সম্মানিত ‘প্রবীণতম কফিখোর’]
এবার জেলা প্রশাসন চাইছে অযোধ্যা পাহাড়কে সম্পূর্ণরূপে প্লাস্টিক ফ্রি জোন করতে। কুশল পল্লি তাদের প্রকল্পে প্লাস্টিককে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে কাঁচের বোতলে পর্যটকদেরকে জল দিচ্ছে। সেখানকার বর্জ্য পদার্থকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে জৈব সার তৈরি করে তাদের চাষাবাদের ফার্মে ব্যবহার করে। এবার অযোধ্যা পাহাড়ে সেই পথেই হাঁটতে চলেছে প্রশাসন। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি পর্যটন প্রকল্পের কাছ থেকে সামান্য অর্থ নিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করে নেবে বাঘমুন্ডি ব্লক প্রশাসন। তার পর তা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ করবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্লাস্টিক ফ্রি জোনের পাশাপাশি শব্দদূষণ যাতে না হয় সেই বিষয়টিও মাথায় রেখেছে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। শীতের সময় সাউন্ড সিস্টেম বাজিয়ে পিকনিক পার্টিদের ব্যাপক হই হুল্লোড় চলে। পাহাড়তলির জঙ্গলে বন্যপ্রাণদের কথা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনের। ওই বৈঠকে বনদপ্তর, বিদ্যুৎ বিভাগ ছাড়াও পুলিশ, শিল্প কেন্দ্র ছিল।