shono
Advertisement

আলিয়া, মাধুকরী হও নয়নমোহিনী, স্বপ্নের কাছাকাছি…

ডাল-ভাত-আলুসেদ্ধর পান্তাভাত জীবনে পিষ্ট হওয়া বাঙালি আবার প্রেমে পড়ল।
Posted: 05:25 PM Jul 30, 2023Updated: 06:32 PM Jul 30, 2023

অরিঞ্জয় বোস: তার খোঁপায় তারার ফুল দেওয়াই যেত। কিন্তু সে যে এলো চুলেই এল, এল হৃদয়-পুরে। এল শ্রাবণের বুকে বহ্নি-পতঙ্গের মতো। মদির চাউনি তার যেন বরষাপীড়িত ফুল। পর্দার রূপকথায় সেই রূপ-রানিকে দেখে আমাদের বিবশ লাগল। আমরা হারিয়ে গেলাম, প্রেম-পীরিতের খরস্রোতা ঘূর্ণিতে। দিন শেষে বাঙালি তো, প্রেম ছাড়া যে পেটের ভাত হজম হয় না!

Advertisement

আমাদের আগের প্রজন্ম, অর্থাৎ নব্বইয়ে যাদের ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, তারা টোল-ট্যাক্স দিয়ে এসেছে প্রীতি জিন্টাকে। ওই টোল খুলেই খোদ খান সাহেব আদায় করে নিয়েছেন তাঁর অগণিত প্রেমিকার দিল-নজরানা। খানদান এখন থাক, চলুক নায়িকা-সংবাদ। ঐশ্বর্য তখনও বচ্চন হননি, নিস্পাপ রাই সুন্দরী। তাঁর ধ্রুপদী সৌন্দর্যে নয়ের প্রজন্ম ফেলত আফসোসের নিশ্বাস, অসহায় বলত ‘হাম দিল দে চুকে সনম’। ছিলেন আর কাজল। স্বপ্নসুন্দরী নন। শুধু অভিনয় স্বপ্নের মতো। ওই স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ, পর্দা আর বাস্তবের অমন অবাধ মেলামেশা, আর কার অভিনয়েই বা ধরা পড়ত! অভিনয়ের মোনালিসা হাসি তিনি, নিজস্ব সৌন্দর্যে যে ভাস্বর হলে আনমনে কখন যেন ‘সূরয হুয়া মধ্যম, চাঁদ ঢলনে লাগা’।

সে এক দিন ছিল বটে! মাল্টিপ্লেক্স, আই ম্যাক্স পূর্ববর্তী দিন। তখনও গানে সুর ছিল, ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শোয়ের কলার তোলা ছিল, ফুলের মালা দিয়ে শাহরুখ-সলমনের ছবি-বরণ ছিল, ছিল পার্কে নোঙর ফেলে প্রেমিকার হাত ধরা, ঐশ্বর্য বা প্রীতি, যা কিছু কল্পনা করে নেওয়া। সময়ের সেই মৌতাত কালের নিয়মে কবে বিদায় নিয়েছে। আবছা হয়েছে হলের ‘গুরু’ ‘গুরু’ হাঁক, ধূসর হয়েছে নায়িকা নামক গোপন প্রেয়সীর সঙ্গে স্বপ্ন-অভিসার। শেষে সেই বেরঙিন দিনকালে, এক বড় বেখাপ্পা সময়ে বসন্ত-বাতাস হয়ে এলেন আলিয়া।

[আরও পড়ুন: আফগানিস্তান থেকে ইরান, ধর্মোন্মাদে হারিয়ে যাচ্ছে মানবমূল‌্য]

ডাল-ভাত-আলুসেদ্ধর পান্তাভাত জীবনে পিষ্ট হওয়া বাঙালি আবার প্রেমে পড়ল। শুরু হল তার উচাটন, আলিয়া নামের এক উশখুশে অভিসারিনীর হাত ধরে। করণের ক্লাসের সেই বোকাসোকা মেয়ে, যে রূপে লক্ষ্মী, গুণে সরস্বতী, বছরের পর বছর বলিউডের ‘স্টুডেন্ট অফ দ্য ইয়ার’। যে সমস্ত বোকামিকে বোকা বানিয়ে দিতে পারে তার অভিনয়ে, পাগলপারা বিহ্বলতায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় ভালবাসার আটলান্টিকে। মিম-শেয়ার করা দর্শক একাকী অন্ধকারে যার মন-চেরা চাহনির সামনে হৃদয় চিরে হাত কামড়ায়, ইশ কী ভুলটাই না করেছিলাম! কেন‌‌ নতজানু হইনি আরও আগে! আসলে আলিয়ার নেশা ততক্ষণে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে সবাইকে, মিষ্টি মহুয়ার মতো। নিটোল সে টোল, সাথী সৌন্দর্যের নায়াগ্রা, আর যুতসই ঈশ্বরপ্রদত্ত অভিনয়। প্রতি অভিব্যক্তিতে প্রাণের সঞ্চার। আলিয়া যেন এক অবয়বে তিন রূপ। কাজল-ঐশ্বর্য-প্রীতি। সময়ের সেই অমোঘ প্রাপ্তি, যাঁকে দেখলে অজান্তেই ঠোঁট থেকে ‘আলি-ওয়াহ’ বেরিয়ে আসে।

দেখতে গেলে, আধমরা আমজীবনে একজন আলিয়া ভাটের বড় প্রয়োজন আছে। যিনি পর্দার পৃথিবীতে অন্তত তিন ঘণ্টার জন্য ফকিরকেও এক প্রেম-দুর্গের বেতাজ বাদশা বানিয়ে দিতে পারেন। যিনি পারেন থোড়-বড়ি-খাড়া, খাড়া-বড়ি-থোড়ের কালশিটে জীবনে আশার উত্তুরে হাওয়ার ঝাপটা দিতে। আর ওই দু’চোখ? যেথা বয় আবেদনের তিস্তা নদী? দৃষ্টির আকুতি দিয়ে যদি মানুষ খুন করা যেত, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সিরিয়াল কিলারের নাম আলিয়া ভাট হতো নিঃসন্দেহে। ‘রকি অউর রানি কি প্রেমকাহানি’তে শেষ বিকেলের সূর্যাস্তের মতো তাঁর অবাধ্য আঁচলের ঢলে পড়া, লো-কাট ব্লাউজের নিষিদ্ধ হেঁয়ালি, তন্বী কটিদেশের ক্রমাগত সাবধানবাণী- বারবার হৃদয়কে বোঝায়, যাহা দেখিলে, জন্মজন্মান্তরেও ভুলিবে না। হায় রে! ভুলিতে কেই-বা চায়! মানুষের পৃথিবীতে আলিয়া যেন সেই অনিবার্য আলেয়া। যাকে ছোঁয়া যায় না বলেই, বিবিক্ষু ঈর্ষা কেঁদে মরে শুধু স্পর্শ-কাতরতায়।

এই ধ্বস্ত, বিরক্ত, ক্লিন্ন সময়ে আপনি আলেয়ার আলো হয়েই না হয় থাকুন আলিয়া। আর আমরা খুঁজে পাই সেই চোখ, যার দিকে তাকিয়ে অন্তত একবার বিদ্রোহী হওয়া যায়, ঠোঁটে ঠোঁট রাখা যায়। নয়নমোহিনী হে, তুমি মাধুকরী চাও, অকাতর দিব, শুধু এক শর্তের বিনিময়ে।
স্বপ্নের বিনিময়ে!

[আরও পড়ুন: হরমনপ্রীত, নিজের অখেলোয়াড়োচিত আচরণে দেশের ক্রিকেটের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না!]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement