সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একদিকে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের বদলা নেওয়ার জন্য চাপ৷ অন্যদিকে, সন্ত্রাসবাদ প্রশ্নে বিশ্বজুড়ে কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার চাপ৷ এই জোড়া চাপের প্রেক্ষাপটেই সোমবার, সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ৷ তাতে তাঁকে নিরাশ হতে হল না৷ কারণ ভারত বিরোধিতার প্রশ্নে ও কাশ্মীর ইস্যুতে বিরোধীদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেলেন তিনি৷ নওয়াজ ও তাঁর পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) দলের চরম শত্রু মূল দুই বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি এবং তোহরিক-ই-ইনসাফ সর্বদল বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে ভারতের বিরুদ্ধে কয়েকটি কড়া প্রস্তাব গ্রহণ করল৷
এই প্রথম বহুধা বিভক্ত যুযুধান পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলি জাতীয় স্বার্থে একমত হল৷ সর্বদল বৈঠকে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে, এরপর ভারত কোনও সামরিক পদক্ষেপ করলে (সার্জিক্যাল অ্যাটাকের মতো) ভারতকে সামরিকভাবেই মোক্ষম জবাব দেওয়া হবে৷ এ ব্যাপারে কোনও বিদেশি শক্তির (আমেরিকার) চাপের কাছে কিছুতেই মাথা নত করা হবে না৷ বালুচিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরে (পাক অধিকৃত কাশ্মীরে) ভারতের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না৷ কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবেই ভারতকে নিয়মিতভাবে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে৷ সিন্ধু-সহ বাকি নদীগুলির জলবণ্টন নিয়ে বৈষম্য করলে বা জল-চুক্তি ভাঙা হলে তা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ ঘোষণা বা আগ্রাসন হিসাবেই দেখা হবে এবং সেই মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার লড়াইকে সবরকম সমর্থন দিয়ে যাবে পাকিস্তান৷
এইদিন বৈঠকে অন্যান্য দলের সাংসদ ও নেতাদের পাকিস্তানের পরিস্থিতি জানান নওয়াজ শরিফ৷ এবং তাঁদের থেকে পরামর্শও চান৷
সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের চাকরির মেয়াদ ফুরোতে চলেছে৷ তাঁর অবসরের পর ভারতের আগ্রাসন ও পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে পাকিস্তান তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিরোধী দলনেতারা৷ উল্লেখ্য, দুই দেশেই সংবাদমাধ্যমে ও রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা, অবসরের আগে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের জবাব দিতে বড় হামলার ছক কষছেন রাহিল শরিফ৷ মরণ কামড় দিতে তৈরি হচ্ছেন তাঁর অনুগত পাক সেনা কর্তারা৷
এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর অফিসার কুলভূষণ যাদবের বয়ানই হল পাকিস্তানের কাছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার৷ এর থেকেই প্রমাণ মেলে ভারত কীভাবে বালুচিস্তানে নাশকতা চালাচ্ছে৷
বৈঠকে পাস হওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বহিঃশক্তির আগ্রাসন ও বিপদ রুখতে, জাতীয় স্বার্থে তারা একসঙ্গে লড়াই করবে৷ অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি গণতান্ত্রিক ও সংসদীয় কাঠামোর মধ্যে সমাধানের চেষ্টাও করা হবে৷
এদিনের ভারত-বিরোধী সরকারি প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়ে সিলমোহর দেয় বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ৷ অনেক দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত নওয়াজের সঙ্গে ব্যক্তিগত রোষ ও রাজনৈতিক কারণে মুখ দেখাদেখি বন্ধ থাকায় এদিনের বৈঠকে আসেননি তেহরিক প্রধান ইমরান৷ তাঁর বদলে বৈঠকে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি৷ পিপিপি-র পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রধান তথা বেনজির পুত্র বিলাবল ভুট্টো জারদারি৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আরও সাতটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী শীর্ষ নেতারা৷
গতকালের বৈঠকে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি), গদর বন্দরের নিরাপত্তা, বালুচিস্তানে ইরানের বর্ডার গার্ডসের গোলবর্ষণ এবং সার্ক সম্মেলন বাতিলের পিছনে ভারতের কৌশল ও চক্রান্ত নিয়ে আলোচনা হয়৷
পাকিস্তানকে সিন্ধু জল চুক্তি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ভারত৷ সেই প্রসঙ্গে ইসলামাবাদের দাবি, সিন্ধু জল চুক্তির পর্যবেক্ষক ও কিষেণগঙ্গা প্রকল্পের অভিভাবক বিশ্বব্যাঙ্ক একটি মীমাংসা আদালত তৈরি করুক যেখানে পাকিস্তানের আপত্তি ও অভিযোগ শোনা হবে৷ তবে ইসলামাবাদের আপত্তি উড়িয়ে দিয়ে নয়াদিল্লি বলেছে, ভারত আন্তর্জাতিক আইন মেনেই প্রকল্পের কাজ করছে৷ ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলচুক্তি মেনেই কাজ চলছে৷ এর পরও পাকিস্তানের আপত্তি থাকলে বিশ্বব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তৈরি কোনও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ কমিটি এই বিবাদের ফয়সালা করুক৷
The post ভারতকে জবাব দিতে বিরোধীদের শরণাপন্ন শরিফ appeared first on Sangbad Pratidin.