সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছোট্ট ফুটফুটে একরত্তি ঐত্রীর মৃতদেহ দেখে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার মা। ঠিক সেই সময়ই খবরটা এল, মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃতার পরিবারের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় প্রাথমিক অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগ, মৃতার পরিবারের সদস্যরা সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে হাসপাতাল চত্বরে ভাঙচুর চালিয়েছে ও মিডিয়াকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হাঙ্গামা বাঁধিয়েছে। বিবৃতি জারি করে আমরি কর্তৃপক্ষ মৃতার পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগের কথা জানিয়ে দেয় সংবাদমাধ্যমকে। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চাইলেন ঐত্রীর বাবা।
[আমার চেয়ে বড় মস্তান আর নেই, আমরি কর্তার শাসানি মৃতার মাকে]
অথচ, মাত্র ঘন্টাখানেক আগেও পরিস্থিতিটা ছিল অন্যরকম। ভুল চিকিৎসায় কামালগাজির আড়াই বছরের ঐত্রী দে-র মৃত্যুর অভিযোগে মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতাল চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠে। অভিযোগ, বুধবার সকালে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। কিছুক্ষণ পরই মারা যায় সে। ঘটনার পর হাসপাতালে চত্বরে তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পরিবারের লোকেরা। চোখের সামনে নিজের শিশুকন্যার মৃত্যু দেখে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন শিশুটির মা। ঘটনায় আমরি হাসপাতালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের পরিবারের লোকেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই সময় বিবৃতি দেয়, ‘তদন্ত হলেই সত্যিটা জানা যাবে।’ এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেন আমরির সিইও। জানিয়ে দেন, ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে জয়ন্তীকে। আর তার খানিকক্ষণ পরেই ভোলবদল!
[ভুল ইঞ্জেকশনের বলি আড়াই বছরের শিশু, তুলকালাম আমরি হাসপাতালে]
হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখানোর সময় সন্তানহারা মা’কে হাসপাতালের ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায় শাসানি দেন ক্যামেরার সামনে। বলেন, ‘এখানে মস্তানি করবেন না। আমার চেয়ে বড় মস্তান কেউ নেই।’
এখানেই শেষ নয়, মৃত শিশুর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে পালটা হাত মুচড়ে দেওয়ার তত্ত্বও খাঁড়া করেন হাসপাতালের ইউনিট হেড।’ পরে অবশ্য ঘরে-বাইরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে প্রকাশ্যেই কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার নাটক করেন জয়ন্তী। কিন্তু নাটকের এখানেই শেষ নয়। জয়ন্তী ক্ষমা চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খানিকক্ষণের মধ্যেই বিবৃতি জারি করে জানিয়ে দেয়, ইউনিট হেড ও আমরি হাসপাতালের সিইওকে হেনস্তা করেছে মৃতার পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতালে ভাঙচুর ও ইউনিট হেডকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে। এই মর্মেই স্থানীয় থানায় দায়ের হয়েছে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, একজন সন্তানহারা মায়ের প্রতি কী করে এরকম অমানবিক ব্যবহার করতে পারে বেসরকারি হাসপাতাল? এর আগেও এই রাজ্যে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রোগীর আত্মীয়দের প্রতি অমানবিক ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের অভিযোগের সুরাহার জন্যই গড়ে দেন স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশন। কিন্তু রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল যে সামান্যতমও বদলায়নি, এদিনের ঘটনা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
[সোনারপুরে বৃদ্ধাকে গণধর্ষণ করে খুন, বাড়ির কাছেই বাগানে মিলল নগ্ন দেহ]
The post অভিযুক্তর পাশে দাঁড়িয়ে ঐত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধেই থানায় আমরি কর্তৃপক্ষ appeared first on Sangbad Pratidin.