অর্ণব আইচ: তাঁর হাতে নেই কোনও বালা। আঙুলে নেই আংটি। গলায় নেই কোনও চেন। জেলের ভিতর অলংকারহীন ‘কোটিপতি’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। গত আগস্টে তিনি কোনও অলংকার না পরেই এসেছিলেন জেলে। তাই তাঁর কাছ থেকে কোনও গয়নাই আর জমা নিতে হয়নি আলিপুর মহিলা জেল কর্তৃপক্ষকে। এদিকে, জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আঙুলে আংটি কীভাবে, তা নিয়ে আদালতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট প্রশ্ন তুলতেই জেলে হিড়িক পড়ে যায় চেন, আংটির মতো গয়না জমা দেওয়ার। এখনও পর্যন্ত কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল ও আলিপুর মহিলা জেলে কয়েক হাজার গয়না জমা পড়েছে বলে খবর। গয়না জমা দেওয়ার পরও কারারক্ষীদের বন্দিদের প্রশ্ন, একসঙ্গে এত চেন, আংটি, বালা জমা পড়ছে। এবার জিনিসগুলি যদি মিশে যায়? জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় যাতে তাঁরা নিজের জিনিসই হাতে পান, সেই অনুরোধই বন্দিরা জানিয়েছেন কারা আধিকারিকদের।
এদিকে জেল কোড মেনে এখন সিবিআইয়ের নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অভিযুক্ত শান্তিপ্রসাদ সিংহ, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়রা এখন বেল্টের বদলে দড়ি দিয়েই প্যান্টের বাঁধন শক্ত করছেন। প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি পার্থ চট্টোপাধ্যায় আদালতের কাছে দাবি করেছিলেন যে, তাঁর আঙুলে যে একাধিক আংটি রয়েছে, সেগুলি তিনি স্বাস্থ্যের কারণে ‘ধারণ’ করেছেন মাত্র। সেগুলি সোনা বা কোনও মূল্যবান ধাতু দিয়েও তৈরি নয়। ইডি আদালতে দাবি করে যে, জেল কোড অনুযায়ী তিনি আংটি পরতে পারেন না। এতেই প্রমাণ যে, তিনি প্রভাবশালী। যদিও জেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সঙ্গে থাকা ঘড়ি থেকে শুরু করে মূল্যবান সব বস্তুই জমা রাখতে হয়। কিন্তু অনেক বন্দিই সংস্কার বা ধর্মবিশ্বাস থেকে আংটি অথবা চেন পরতেন। সেই চেনের সঙ্গে বসানো থাকে লকেট, যার উপর আধ্যাত্মিক কারণে ভরসা রাখেন জেলবন্দিরা। সেই কারণে তাঁরা সেগুলি নিজের থেকে জমা না দিতে চাইলে কর্তৃপক্ষও জমা নিতেন না। আবার মহিলা জেলের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, অনেক বন্দিই হাতে বালা, কানে দুল, আংটি বা চেন পরেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহিলা বন্দিরা জেলে কর্তৃপক্ষর কাছে জমা দিতেন না শরীরে থাকা অল্প পরিমাণ গয়না।
[আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস, দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখী, কী বলছে হাওয়া অফিস?]
কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আংটি-কাণ্ড ঘটার পরই পালটে গিয়েছে পরিস্থিতি। জেলের আধিকারিকরা প্রত্যেক বন্দিকে নির্দেশ দেন, কঠোরভাবে জেল কোড মেনে যাবতীয় গয়না বা বস্তু কর্তৃপক্ষর কাছে জমা করতে। সেইমতো প্রেসিডেন্সি জেলের বন্দিরা তাঁদের গয়না ও কাছে থাকা অন্যান্য বস্তু জমা দেন। আলিপুর মহিলা জেলেও একইভাবে প্রত্যেক মহিলা বন্দির কাছে গিয়ে যাবতীয় গয়না জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু পার্থর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কাছে যাওয়ার পর তিনি কারা আধিকারিকদের জানিয়ে দেন, তাঁর কাছে কোনও ধরনের গয়না বা অলংকার নেই। তিনি কিছুই পরে জেলে আসেননি। যদিও তা শুনে কিছুটা অবাকই হন কারা আধিকারিকরা। সেখানে ‘কোটিপতি’ অর্পিতাকে অলংকারহীন দেখে আশ্চর্যই হন মহিলা জেলের আধিকারিকরা। তাই অর্পিতার কাছ থেকে কিছুই জমা নেওয়া হয়নি। যদিও মহিলা জেলের অন্য বন্দিদের কাছ থেকে প্রচুর গয়না জমা নেওয়া হয়েছে বলে খবর। তবে কারা আধিকারিকরা বন্দিদের নিশ্চিত করেছেন যে, নিয়ম মেনেই প্রত্যেককে গয়না বা মূল্যবান বস্তু আলাদাভাবে প্যাকেটে বাক্সবন্দি করে সুরক্ষিতভাবে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে বন্দিদের অনুমতি নিয়ে সেগুলি বাড়ির লোকেরা নিয়ে যেতে পারেন।