দেব গোস্বামী, বোলপুর: বিশ্বভারতীর উপাচার্য-সহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষ মামলায় সিউড়ি আদালতে ১৪৪ পাতার চার্জশিট জমা পড়েছে আগেই। আর ঠিক তারপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল অডিট অফিসার প্রশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল আদালত। সিউড়ি জেলা আদালতের তদন্তকারী অফিসার স্বপনকুমার চক্রবর্তী চার্জশিট জমা করেন বলে জানা যায়। উপাচার্য-সহ মোট তিনজনের হাই কোর্টে রক্ষাকবচ রয়েছে। কিন্তু প্রশান্তবাবু রক্ষাকবচ না থাকায় শনিবার আদালত তার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একমাসের মধ্যে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে বলেই বিচারক পুলিশকে নির্দেশ দেয়।
আগেই বিশ্বভারতীর জাতিবিদ্বেষ মামলায় এবার চার্জশিটে স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। শাস্তিমূলক কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশও দেয় আদালত। সম্প্রতি উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেপুটি রেজিস্ট্রার তন্ময় নাগ, ইন্টারনাল অডিট অফিসার প্রশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। অমানবিক জাতিবৈষম্য, কর্মজীবনে মানসিক আঘাত অভিযোগে শান্তিনিকেতন থানায় দারস্থ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার প্রশান্ত মেশরাম।
অভিযোগের ভিত্তিতে ডিএসপি পদমর্যদায় এক অফিসার তদন্ত শুরু করেন। সিউড়ি জেলা আদালত নির্দেশ দেয় ১৮ই আগস্ট উপাচার্য সহ তিন আধিকারিকদের স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। এরপরই এই মামলায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়। হাই কোর্টও শোকজ, চার্জশিট তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে।আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে সেই মামলার শুনানি হবে। সিউড়ি আদালতে বৃহস্পতিবার ১৪৪ পাতার চার্জশিট জমা পরার পর শনিবার মামলার শুনানি হয়।
[আরও পড়ুন: ধূপগুড়ি উপনির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে জোর ধাক্কা, বিজেপিতে যোগ প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের]
মহারাষ্ট্র থেকে শান্তিনিকেতনে কর্মসূত্রে আসেন তপশিলি জাতিভুক্ত বিশ্বভারতীর এই আধিকারিক প্রশান্ত মেশরাম। শুধুমাত্র তপশিলি উপজাতিভুক্ত হওয়ার জন্যই হেনস্তা এবং কর্মজীবনে অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় বলে অভিযোগ ওঠে। প্রসঙ্গত, কয়েকমাস আগেই কোরাপুটে সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় ওড়িশায় কন্ট্রোলার অফ এক্সামিনেশনে মনোনীত হন প্রশান্ত। এরপরই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অব্যাহতি না দিয়ে যাতে সার্ভিস ব্রেক হয়ে যায় সেই চেষ্টা করতে থাকেন বলে অভিযোগও ওঠে।
বর্তমানে প্রশান্ত মেশরাম উড়িষ্যার কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক।বাধ্য হয়েই অ্যাকাডেমিক অ্যান্ড রিসার্চ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রথমে কেন্দ্রীয় তপশিলি জাতি কমিশনের দ্বারস্থ হন। পরে সিউড়ি আদালত কলকাতা হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টেও দারস্থ হন বলে জানা যায়। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই জাতীয় তপশিলি জাতি কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অরুণ হালদার উপাচার্যকে স্বশরীরে দিল্লিতে ডেকে হুঁশিয়ারিও দেন।
হাইকোর্টও শোকজ, চার্জশিট তদন্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করে। কর্মসমিতির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে পাঠায় আদালত।যদিও উপাচার্য-সহ মোট ৩ জনের হাই কোর্টে রক্ষাকবচ থাকায় পুলিশ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তবে জানা যায়, চার্জশিটে নাম থাকা ইন্টারনাল অডিট অফিসার প্রশান্ত ঘোষের রক্ষাকবচ না থাকায় আদালতে ওয়ারেন্ট ইস্যুর আবেদন করেছেন তদন্তকারী অফিসার।
আইনজীবী মলয় মুখোপাধ্যায় জানান,” অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের বিভাগীয় তদন্তের পরই সিউড়ি আদালতে চার্জশিট জমা পড়েছে। বিশ্বভারতীর আধিকারিক প্রশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারির আবেদন করেছিলেন তদন্তকারী অফিসার। সেই আবেদনে আদালত সাড়া দিয়েছে এক মাসের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিশ, নির্দেশ আদালতের। যদিও এ বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।