আলাপন সাহা: শনিবার দুপুরে প্রেমদাসা চত্বরে গেলে একটু অবাকই হতে হবে। ইডেনে (Eden Gardens) ভারতের কোনও ম্যাচ থাকা মানেই ঘণ্টা দু’য়েক আগে থেকেই এসপ্ল্যানেড অঞ্চল গমগম করবে। ট্রাফিক থাকবে। হকারদের চিৎকার-চেঁচামেচি থাকবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, শনিবার এসব কোনও কিছুই চোখে পড়ল না প্রেমদাসার আশেপাশে। রাস্তায় ভিড় নেই। স্টেডিয়াম ঢোকার আগে রাস্তার দু’পাশে গোটা কয়েক শ্রীলঙ্কার জার্সি ঝুলছে। কেনার ব্যাপারে খুব একটা কেউ আগ্রহও দেখাচ্ছেন না। কে বলবে, ঘরের টিম এখানে সুপার ফোরের যুদ্ধে নামছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সনৎ জয়সূর্য (Sanath Jayasuriya), চামিন্ডা ভাসের মতো প্রাক্তনরা এসেছেন। কিন্তু অদ্ভুতভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, এখানকার মানুষ। গ্যালারির বেশিরভাগ অংশই ফাঁকা ধু-ধু করছে। দুপুরের দিকে মেরেকেটে হাজার তিনেক লোক হবে। পরের দিকে হয়তো কিছুটা দর্শক বাড়ল, তবে সেটাও খুব বেশি নয়।
তবে প্রেমদাসার (Premadasa Stadium) এহেন দুর্দশার ছবিটা বদলাতে পারে রবিবার। ভারত-পাকিস্তান মহারণ ঘিরে উত্তেজনার গণগণে আঁচটা পাল্লেকেলের মতো হবে কি না, তা বলা যাচ্ছে না। তবে শহরজুড় উন্মাদনা যে থাকবে, তা বলাই যায়। গল ফেসে রোডের পাশেই ভারত মহাসাগর। মেরিন ড্রাইভের মতোই সেখানে সকাল থেকে ভিড়। সন্ধের পর থেকে সেটা আরও অনেক বাড়ে। এদিন দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে জায়ান্ট স্ক্রিন বসানোর কাজ হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: পাকিস্তানের তিন আগুনে পেসারকে খেলা বাড়তি চাপের! সত্যিটা মেনে নিলেন শুভমান]
কলম্বোয় এক বিখ্যাত ক্রিকেট ক্যাপে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এক দম্পতি কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে এই ক্যাফে চালাচ্ছেন। সেখানেও বড় স্ক্রিন থাকছে। দুপুর থেকেই প্রচুর ভিড়-টিড় হতে পারে, সেটা আগাম করেই রবিবার ভারত-পাক ক্রিকেট যুদ্ধের জন্য আগাম প্রস্ততি শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে একটাই প্রার্থনা পাল্লেকেলের মতো এখানে যেন বৃষ্টি বাঁধা হয়ে না যায়। রবিবার বৃষ্টির পূর্বাভাসও রয়েছে নব্বই শতাংশ। সেই কথা মাথায় রেখেই রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে। তবে শনিবার সকাল থেকেই কলম্বোয় বেশ চড়ড়ে রোদ উঠেছে। এদিনও বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। তবে রাত পর্যন্ত একফোঁটা বৃষ্টি হয়নি। সেটাই আরও আশা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
[আরও পড়ুন: সমারবিক্রমার ব্যাট, শনাকার বোলিংয়ের কাছে হেরে এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের বিদায়]
তবে যাদের নিয়ে এত কিছু, সেই দুটো টিমই অদ্ভুত রকম শান্ত। কোনও হুঙ্কার নেই। পাল্টা হুঙ্কার নেই। দুটো টিমই প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবার চেয়ে নিজেদের নিয়ে বেশি ফোকাস করছে। প্রেস কনফারেন্সে এসে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম (Babar Azam) যেমন বলে গেলেন, তিনি ভাগ্যবান যে এরকম একটা পেস অ্যাটাক পেয়েছেন বলছিলেন, ‘‘আমাদের পেস অ্যাটাক বিশ্বের অন্যতম সেরা। আর এর একট পেস অ্যাটাক পাওয়াও ভীষণ গর্বের ব্যাপার। পেসারকে আপনাকে ম্যাচ জেতাবে। টুর্নামেন্ট জেতাব। তাই ওদের উপর ভরসা রাখতেই হবে।’’ বাবর প্রেস কনফারেন্স শেষ করে যাওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পরে এল ভারতীয় দল। আগের দিন অনেক রাত পর্যন্ত প্র্যাকটিস করেছিল। তাই এদিন ঐচ্ছ্বিক ট্রেনিং সেশন রাখা হয়েছিল। রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের কেউই আর মাঠমুখো হননি। জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি-সহ বাকি পেসাররাও হোটেলে বিশ্রাম নিলেন। শুভমান গিল, লোকেশ রাহুল, রবীন্দ্র জাদেজাদের মতো জনা ছ’য়েক ক্রিকেটার প্রেমদাসার প্র্যাকটিস এরিয়ার ঘণ্টা দু’য়েক ধরে ট্রেনিং করে গেলেন।
রাতের দিকে পাকিস্তান টিম নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ার পেজে প্রথম এগারো ঘোষণা করে দিলেও, ভারতীয় টিম (Indian Team) কী কম্বিনেশনে নামবে, সেটা নিয়ে একটু ধোঁয়াশা থাকছে। পাল্লেকেলেতে তিন পেসার নিয়ে খেললেও, প্রেমদাসায় হয়তো স্পিনাররা বাড়ানো হচ্ছে। কারণ এখানে যেরকম পিচ, সেখান বল ঘুরবে, সেটা মোটামুটি পরিষ্কার। শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ম্যাচেও সেটা দেখা গিয়েছে। স্পিনাররা একটু বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। সেই কথা মাথায় রেখেই হয়তো জাদেজা-কুলদীপ যাদবের সঙ্গে অক্ষর প্যাটেলকেও খেলানোর একটা ভাবনা-চিন্তা চলছে। সেক্ষেত্রে শার্দূল ঠাকুরকে (Shardul Thakur) বাইরে রাখা হতে পারে। তবে সেটা হলেও যে সমস্যা মিটছে, তা নয়। জশপ্রীত বুমরাহ ফিরে এসেছেন। তাঁর খেলা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এখন মহম্মদ শামি না মহম্মদ সিরাজ কার জায়গায়, বুমরাহ খেলবেন, সেটাই দেখার। একইরকম ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে লোকেশ রাহুলকে নিয়েও। এদিন নেটে দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং করলেন। চোট সারিয়ে দীর্ঘদিন পর ফিরেছেন।
বিশ্বকাপের (ICC Cricket World Cup) আগে টিম ম্যানেজমেন্টও চাইবে রাহুলে যাতে কয়েকটা ম্যাচ খেলে নিতে পারেন। কিন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাল্লেকেলের বিরুদ্ধে ঈশান কিষাণ যে ইনিংসটা খেলেছিলেন, তারপর মনে হয় না তাঁকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত রাহুল দ্রাবিড়রা নেবেন। সেক্ষেত্রে একটাই বিকল্প থাকছে। চার নম্বরে শ্রেয়স আইয়ারের জায়গায় খেলাতে হবে কেএলকে। কিন্তু রাহুলের মতো শ্রেয়সও দীর্ঘদিন পর চোট সারিয়ে ফিরে সবেমাত্র একটা ম্যাচ (নেপালের বিরুদ্ধে ব্যাটিংয়ের সুযোগ হয়নি) খেলেছেন। তাই তাঁর জায়গায় এক্ষুণি রাহুলকে খেলানোর ঝুঁকি টিম ইন্ডিয়া নেয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
আজ এশিয়া কাপে
ভারত বনাম পাকিস্তান
কলম্বো, দুপুর ৩.০০
সম্প্রচার স্টার স্পোর্টসে।