দীপঙ্কর মণ্ডল: শততম জন্মদিনে ‘নিজভূমেই পরবাসী’ হয়ে থাকার প্রবল সম্ভাবনা বিশ্বের অন্যতম সেরা পরিচালকের। ২ মে অস্কার জয়ী সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) শততম জন্মদিন। ওই দিনই আবার বাংলা—সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ। সকাল থেকে সবার নজর থাকবে সেই দিকে। তার মধ্যে কিংবদন্তি মানুষটিকে কতটা স্মরণ করা সম্ভব হবে তা নিয়ে চিন্তায় আকুল ভক্তকূল। তাঁদের আফশোস, সত্যজিতের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের শুরুতেই ধাক্কা খেতে হয়েছে। গত বছর ওই সময় করোনা সতর্কতায় দেশ জুড়ে চলছিল লকডাউন। মনের মতো করে সত্যজিতকে স্মরণ করতে পারেনি বাঙালি। এবারও তা কতটা সম্ভব তা নিয়ে আশঙ্কিত খোদ সত্যজিতের পরিবারের সদস্যরা।
চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত কলাকুশলী ও সিনেমা নিয়ে পড়াশোনা করা পড়ুয়াদের আশা, নয়া দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চয়ই সত্যজিতের শততম জন্মদিন সাড়ম্বরে উদযাপন করবে। তবে বেশিরভাগই আশাহত। কারন ওই সময় নির্বাচনী আচরণবধি জারি থাকবে। ফলে বিদায়ী রাজ্য সরকার চাইলেও দিনটিকে সাড়ম্বরে উদযাপন করতে পারবে না। নবান্নে নিয়ম মেনে নিশ্চই শিল্পীর ছবিতে ফুল দেওয়া হবে। তবে যতটা উচ্ছ্বাস এবং আনন্দ আয়োজন ‘পথের পাঁচালী’র নির্মাতার জন্য হওয়া উচিত ছিল, তা কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
[আরও পড়ুন: অনুব্রতকে হুমকি দিয়ে ধৃত বিজেপি নেতা পেলেন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা! তুঙ্গে বিতর্ক]
বাংলার অন্যতম সেরা নক্ষত্র সত্যজিৎ জন্মেছিলেন উত্তর কলকাতার গড়পার রোডে। রবীন্দ্রনাথের পর এমন আন্তর্জাতিক মানের বহুমুখী প্রতিভা পায়নি বাঙালি। সারা বাংলা জুড়ে সত্যজিতের শততম জন্মদিন আয়োজনে মুখর থাকার কথা ছিল। বহুমুখী ব্যক্তিত্বের প্রতিভূ তিনি। তুলি, কলম, ক্যামেরা ও সুরের প্রয়োগে তাঁর নিপুণ দক্ষতা অবিস্মরণীয়। সাহিত্যে, চলচ্চিত্রে, সংগীতে এবং শিল্পে তিনি নতুন ধারা দিয়েছেন বিশ্বকে। বইয়ের প্রচ্ছদ বা গ্রন্থচিত্রণেও তাঁর হাত ধরে এসেছে নয়া টাটকা হাওয়া। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির অঙ্গনে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বাংলা বর্ণলিপির চরিত্র চিত্রণে তাঁর ভাবনার স্বাক্ষর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের যখন অন্তিম পর্ব চলছিল, ঠিক তখনই আবির্ভাব হয়েছিল ‘ফেলুদা’র। তিন বয়সে, তিন ভিন্ন চরিত্র মিলে ফেলুদার মত কাউকে আর পাওয়া যায়নি। সত্যজিতের আর এক অমর সৃষ্টি বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কুও আপামর বাঙালি পাঠকের অতি প্রিয় চরিত্র। সব মিলিয়ে তাঁর প্রতিভার তুলনা হয় না। এহেন সত্যজিতের জন্ম শতবর্ষ যে কিছুটা অবহেলায় থেকে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
জাপানি চিত্রপরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া বলেছিলেন, “যিনি সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র কখনও দেখেননি, তিনি এই পৃথিবীতে বাস করেও সূর্য এবং চন্দ্র দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করেছেন নিজেকে।” যাঁর ছবিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন একজন মহান পরিচালক, তাঁর শততম জন্মদিনই হারিয়ে যাবে ভোটের ফলের জন্য। শ্যাম বেনেগাল বারবার বলেছেন, “সত্যজিৎ রায়ই হচ্ছেন একমাত্র ভারতীয় চলচ্চিত্রকার যিনি ছবি করেছেন ভারতীয় পদ্ধতিতে।’’ দেশের অন্যতম সেরা সেই সন্তানের জন্মের ১০০ বছর কেন্দ্রীয় সরকার সাড়ম্বরে উদযাপন করবে বলে আশা করছে বাঙালি। সত্যজিতের বাড়িতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভারতের শ্রেষ্ঠ ছাপাখানা, বাংলার শ্রেষ্ঠ শিশু—কিশোর পত্রিকা ‘সন্দেশ’। সেই বাড়িতে একটি স্থায়ী মিউজিয়াম গড়ে ওঠেনি। সেই আশাতেও বুক বাঁধছেন সত্যজিৎ ভক্তরা।