অর্ণব আইচ: কলামন্দিরে হওয়া একটি মিটিংয়েই একেকটি বেসরকারি বিএড (B.Ed)ও ডিএলএড (D.El.Ed) কলেজের কাছ থেকে খোলাখুলি নেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। ওই টাকা জমা হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যর ছেলের সংস্থার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। ওই মিটিংয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya)। বৈদ্যুতিন সামগ্রী সংক্রান্ত পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার যে বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে, মানিক তা বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজগুলির কর্মকর্তাদের রীতিমতো বোঝান।
ইডির দাবি, এভাবে খোলাখুলি ‘তোলাবাজি’ করে বিপুল টাকা হস্তগত করেন মানিক। পরে ইডি (ED) মানিকের ছেলের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে। এদিকে, টেট দুর্নীতিতে ৩২৫ জন চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা নেওয়া হয় বলে দাবি ইডির। মানিককে গত ২৩ নভেম্বর, বুধবারই প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে জেরা করেছে ইডি। রাজ্যের বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজগুলিকে এনওসি দেওয়ার নাম করেও পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্য মিলে বিপুল পরিমাণ টাকা তোলেন ও সেই তদন্ত চলছে বলে আদালতে জানিয়েছে ইডি। বৃহস্পতিবার মানিক ভট্টাচার্যকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। তাঁর জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্ত। ইডির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি জামিনের বিরোধিতা করেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে মানিককে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
[আরও পড়ুন: ‘গদ্দার কখনও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে না’, পাইলটের উদ্দেশে ঝাঁজালো আক্রমণ গেহলটের]
ইডির সূত্র জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৪২ জন বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজের কর্মকর্তাকে ডেকে জেরা করা হয়েছে। তাঁরা ইডিকে জানান, কলামন্দিরে অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডাকা মিটিংয়ে কলেজের পক্ষে তাঁদের হাজির হতে হয়। তার আগেই তাঁদের ফোন ও মেসেজ করে জানানো হয়েছিল, কলামন্দিরে প্রত্যেক কলেজকে ৫০ হাজার টাকার চেক নিয়ে আসতে। অ্যাকিউর কনসালটেন্সি সার্ভিসেস সংস্থার নামে তাঁরা ওই চেক দেন। উল্লেখ্য, ওই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হচ্ছেন মানিকের ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডল।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দাবি, কলেজগুলি যাতে অবশ্যই ওই ‘তোলাবাজি’র টাকা দেয়, নিজের বক্তৃতায় সরাসরি তা জানিয়ে দেন মানিক। যে সংস্থাটির নামে চেক দেওয়া হয়, সেই সংস্থাটি যে মানিকের ছেলের, তা জানতেন না কলেজের কর্মকর্তারা। ওই টাকা নেওয়ার পরও কোনও কাজ কলেজে হয়নি। এই ব্যাপারে আরও তথ্য জানতে অন্যদেরও জেরা করা হবে। অফলাইনে বেসরকারি কলেজে ভরতির জন্য একেকজন ছাত্রর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নিয়ে মোট ২০ কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন মানিক। ওই টাকা ‘তোলাবাজি’ ছাড়া কিছু নয় বলে দাবি ইডির। ইডির আইনজীবীর দাবি, এখনও পর্যন্ত মানিক ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে ৩০ কোটি টাকার টেট দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ২০১১ সাল থেকে ৫৮ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হয়েছেন। চোখ বন্ধ করে দুর্নীতি করেছেন মানিক ভট্টাচার্য ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: দিনভর সওয়াল-জবাব শেষে মিলল জামিন, ডিএ আন্দোলনকারীদের হয়ে সওয়াল বিকাশরঞ্জনের]
অভিযুক্তর আইনজীবী জানান, সিবিআই ও ইডি একসঙ্গে আর্থিক দুর্নীতির মামলা করতে পারেন না। আর কতদিন তদন্তের নাম করে তাঁকে জেলা আটকে রাখা হবে? বিচারকের বক্তব্য, জেলে সংশোধন করার জন্যই পাঠানো হয়। ইডির আইনজীবীর দাবি, এই দুর্নীতির ফল ভোগ করতে হচ্ছে সেই চাকরিপ্রার্থীদের, যাঁরা রাস্তায় আন্দোলন করছেন। ভুয়া শিক্ষক ভরতি হয়ে যাওয়ার ফলে যথাযথ শিক্ষাও পাচ্ছেন না শহর থেকে গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা। তাই ইডির তদন্তের প্রয়োজন। অভিযুক্তর আইনজীবী মন্তব্য করেন, চাকরিপ্রার্থীদের দুঃখ ঘোচানোর দায়িত্ব কি ইডি-র? জেলে মানিকের পর্যাপ্ত জেরা ও জেলবন্দি অবস্থায় তাঁকে জেরার অনুমতি দিয়েছে আদালত।