রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের জেরে পতন ঘটেছে শেখ হাসিনা সরকারের। পদ্মাপারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এই মুহূর্তে অশান্ত বললেও কম বলা হয়। আর সেই রাজনৈতিক ‘ঘূর্ণাবর্তে’ পরে দেশের দুই ক্রিকেট মহানায়ক রাতারাতি ‘খলনায়ক’ হয়ে গিয়েছেন!
বলা হচ্ছে মাশরাফি মোর্তাজা এবং শাকিব-আল-হাসানের কথা। অ্যাদ্দিন পদ্মাপারে জনপ্রিয়তার বিচারে উপরের দুইয়ের মধ্যে কে এগিয়ে, তা নিয়ে তর্ক চলত। দেশের হয়ে খেলা বহুদিন আগে ছেড়ে দেওয়ার পরেও ও পার বাংলার মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিলেন মাশরাফি। প্রাক্তন বাংলাদেশ অধিনায়কের আবেগ, তাঁর ভাবমূর্তি, ক্রিকেটমহল থেকে আমজনতা–সবারই হৃদয়ে দোলা দিত। শাকিব আবার ছিলেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মুখ। কিন্তু সোমবারের পর যা অবস্থা, তাতে সাকিব-মাশরাফির মধ্যে কে বেশি ‘চক্ষুশূল’ তা নিয়ে চর্চা হতে পারে!
[আরও পড়ুন: চোখের সামনে ভাঙছে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ইস্টবেঙ্গল প্রাক্তনী আসলামের]
মাশরাফির নড়াইলের বাড়ি তো জ্বালিয়ে দেওয়া হল! পুড়ল শাকিব-আল-হাসানের পার্টি অফিস। তিনি নিজেও কবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরবেন, কেউ জানে না!
আসলে মাশরাফি এবং শাকিব–দু’জনই হাসিনার দল আওয়ামি লিগের সাংসদ। এবং এখন দু’জনের অবস্থাই বেশ সঙ্গীন। মাশরাফির বাড়ি নড়াইলে।
এ দিন দুপুরের দিকে, মাশরাফির সেই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়! বাংলাদেশে ফোন করে জানা গেল, কিছু দিন আগেও জনতার নয়নের মণি বলে পরিচিত ‘ম্যাশ’, ঘটনার সময় ছিলেন ঢাকাতে। সেখানেই জানতে পারেন, তাঁর নড়াইলের বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। অবস্থা বেগতিক বুঝে নড়াইলের বাড়িতে থাকা মাশরাফির পরিবারের কাউকে কাউকে সরিয়ে নিয়ে যান পাড়া-প্রতিবেশীরা। এটাও শোনা গেল, মাশরাফি বারবার ‘ফায়ার ব্রিগেড’-এ ফোন করে গেলেও কোনও লাভ হয়নি। তাঁর নড়াইলের বাড়ির অগ্নি নির্বাপণে দমকল আধিকারিকরা নাকি আগ্রহ দেখাননি!
শাকিব–তিনি এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বাংলাদেশ অলরাউন্ডার মার্কিন প্রদেশে। কানাডা জি-টি-টোয়েন্টি খেলতে ব্যস্ত। শাকিবের ঘনিষ্ঠমহলে ফোন করে জানা গেল, নিকট ভবিষ্যতে দেশে ফেরার কোনও সম্ভাবনাই নেই শাকিবের। কারণ, বর্তমান অবস্থায় তিনি দেশে ফিরলে কোথা থেকে কী হয়ে যাবে, কেউ জানে না। শাকিবকে নিয়েও যে গভীর ‘বিম্বিষা’ তৈরি হয়েছে পদ্মাপার জুড়ে! আপাতত শাকিব পাকিস্তান ও ভারত, দু’টো সিরিজ খেলবেন। খেলা যখন থাকবে না, তখন আমেরিকাতেই থাকবেন। মাস তিন-চার পর যদি দেখা যায়, পরিস্থিতি অনুকূল, পায়ের তলায় পুরনো জনপ্রিয়তার হারানো জমি তিনি ফিরে পেয়েছেন, তবেই একমাত্র নাকি তিনি বাংলাদেশে ফেরার কথা ভাববেন!
ঘুরেফিরে কী দাঁড়াল?
জাতীয় দলের হয়ে একসঙ্গে খেলতেন যখন, বাংলাদেশকে বহু হারা ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছেন শাকিব-মাশরাফি। হারানো সম্মান পুনরুদ্ধারের ম্যাচটা তাঁরা এখন জিততে পারেন কি না, দেখার। তবে এটুকু লিখে দেওয়া যায়, কাজটা নিঃসন্দেহে অনেক, অনেক বেশি কঠিন। কারণ, শাকিব বা মাশরাফি–কারও হাতে কিন্তু এ যুদ্ধে ব্যাট কিংবা বল নেই!