সুকুমার সরকার, ঢাকা: উদ্বিগ্ন বাড়িয়ে বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যায় গড়ছে নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বয়ং জাহিদ মালেকও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। এর থেকে খুব সহজে নিস্তার মিলবে না বলেও মন্তব্য দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
একদিনেই নতুন করে ২৩৯ জন পুলিশকর্মী করোনা (Corona) ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, যা নতুন নজির গড়েছে। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১১৫৩ জন পুলিশ। আর প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন শুনে ঢাকায় এক পুলিশকর্মী নিজের বাড়ির পাঁচতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পদে আত্মহত্যা করেছেন। বিশ্বে করোনা আক্রান্তের তালিকায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এরই মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের দিক দিয়ে বিশ্বে ৩৭তম স্থানে চলে এসেছে বাংলাদেশ। এমনই তথ্য দিচ্ছে করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী তথ্য দেওয়া ওয়ার্ল্ডওমিটার।তাদের ওয়েবসাইটে করোনা আপডেটে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ১০ হাজার ৯২৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি হিসেবে মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনার প্রকোপে ১৮৩ জন মারা গেছেন। আর সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৪০৩ জন।
[আরও পড়ুন: চব্বিশ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৭৮৬, করোনার কামড়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ ]
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৭৮৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগের দিন সোমবার আক্রান্ত হন ৬৮৮ জন। ফলে দেখা যাচ্ছে, দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ৫ এপ্রিল বাংলাদেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৭০ জন। এক মাসে তা বেড়েছে ১০ হাজার ৮৫৯ জন। আক্রান্তের মধ্যে ৬৮ শতাংশ পুরুষ এবং ৩২ শতাংশ নারী। মৃতদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ পুরুষ এবং ২৭ শতাংশ নারী। যারা মারা গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে ষাটোর্দ্ধ ছিলেন ৪২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ছিলেন ২৭ শতাংশ। করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়া মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে। এরপরই রয়েছে চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ বিভাগ।
এপ্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এখন স্বাভাবিকভাবেই মার্কেট খোলা হয়েছে। গার্মেন্টস খোলা হয়েছে, দোকানপাটে আনাগোনা বাড়ছে। কাজেই সংক্রমণ যে বৃদ্ধি পাবে, এটি আমরা ধরেই নিতে পারি। আমাদের যতটুকু সম্ভব এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জীবন ও জীবিকা দুটোই পাশাপাশি যাবে। আমাদের লক্ষ্য হল যাতে রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পায়।’
[আরও পড়ুন: বানচাল ভারত হয়ে সৌদি যাওয়ার ছক, ঢাকায় ধৃত ১৭ জন JMB জঙ্গি]
মঙ্গলবার পর্যন্ত ৬২ জন সংবাদমাধ্যমের কর্মীও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১১ জন, আর মৃত্যু হয়েছে একজনের। তিনি দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার মুখ্য সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন। অন্যরা চিকিৎসাধীন আছেন। এই খবর প্রকাশ করেছে সাংবাদিকদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশ করা ফেসবুক পেজ ‘আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের অধিকার।
এপ্রসঙ্গে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত করোনায় ৬২ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন সুস্থ হয়েছেন। প্রয়াত সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন সংগঠনের সিনিয়র সদস্য ছিলেন। বুধবারই ডিআরইউ কার্যালয়ে করোনা জীবাণুমুক্তকরণ চেম্বার স্থাপন করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির এই চেম্বার দিয়ে প্রবেশ করলে জীবাণুবহনকারী ব্যক্তির কাছ থেকেও জীবাণু ছড়াবে না। এ ছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যদের করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তাদের ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয় গিয়ে নমুনা দিতে বলা হয়েছে। এরপর ওই নমুনা সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক এবং সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা করোনায় মারা গেলে আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের দাবি, একইভাবে সরকার এবং মালিকপক্ষও যেন আক্রান্ত সাংবাদিকদের অনুদান দেয়। কারণ, সাংবাদিকরা দেশের জন্যই কাজ করছেন এবং করোনা যুদ্ধে তাঁরা প্রথম সারির সৈনিক।’
The post ‘সহজে হবে না করোনামুক্তি’, বলছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক appeared first on Sangbad Pratidin.