ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: রেমাল ঘূর্ণিঝড়ের রাত। ঝোড়ো হওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির দাপট। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। দিকভ্রান্ত হয়ে ছুটে আসছেন এক তরুণী। পথ চলতি দুই যুবককে দেখে করুণ আর্তি, "তোমরা আমার প্রিয় ভাই। আমাকে আমার বাবা মায়ের কাছে পৌঁছে দাও।" চোখের তলায় কালি। মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। ক্লান্ত শরীর। তার উপর বৃষ্টিতে ভিজে অবসন্ন শরীর। তরুণী হারিয়ে গিয়েছে বুঝতে অসুবিধা হয়নি যুবকদের। তাঁকে আশ্রয় দিয়ে খবর দেন, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে। সেখান থেকে খবর যায় হ্যাম রেডিওয়। অবশেষে পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে তরুণীর। এখন শুধু বাড়ি ফিরে যাওয়ার অপেক্ষা।
রবিবারে রেমাল আছড়ে পড়ে বাংলাদেশে (Bangladesh)। সেই রাতেই হাওড়ায় ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় তরুণীকে খুঁজে পান স্থানীয় দুই যুবক। তাঁর নাম সুমি। বাড়ি বাংলাদেশ। ওপার বাংলা থেকে বান্ধবীদের সঙ্গে চলে আসেন পশ্চিমবঙ্গে। অসাধু চক্রের খপ্পরে পড়ে যান তিনি। তাঁকে বন্দি করে দিনের পর দিন চলতে থাকে অত্যাচার। অভিযোগ, জোর করে ড্রাগের নেশা করানো হত। সঙ্গে চলত শারীরিক নিগ্রহও। কথাগুলো বলার সময় হাত, পা কেঁপে উঠছিল সুমির। জানা গিয়েছে, তরুণী বিবাহিত। রয়েছে সন্তানও। তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া আশ্বাস দেয় হ্যাম রেডিওর সদস্যরা। খবর যায় হ্যাম রেডিওর (HAM Radio) বনগাঁর সদস্য রুদ্রপ্রাসাদ ঘোষের কাছে।
[আরও পড়ুন: শহরবাসীকে ‘পানের অযোগ্য’ জল সরবরাহ! বিতর্কে শিলিগুড়ি পুরসভা]
সেখান থেকে খবর যায় বাংলাদেশের হ্যাম রেডিওর সদস্যদের কাছে। সেদেশের সদস্য অনুপ ভৌমিক সুমির পরিবারকে খুঁজতে নেমে পড়েন। অবশেষে সাফল্য। তরুণীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খুঁজে পাওয়া যায়, স্বামী ও তাঁর পরিবারকে। ভিডিও কলে কথাও হয় তাঁদের। চোখের জলে ভেসে যাচ্ছিল তাঁদের দুনিয়া। কথা বলছিল আগলহীন অশ্রু। তবে মুখে খুশির ঝলক। মাকে দেখতে পেয়ে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে ছিল ছোট্ট বাচ্চাটি।
এখন শুধু অপেক্ষা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে নিজের সুমিকে তাঁর 'বাসা'য় ফিরিয়ে দেওয়ার। পশ্চিমবঙ্গের হ্য়াম রেডিওর সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, "ভিডিও কলে সুমিকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলানো হয়েছে। দুই দেশের হ্যাম রেডিওয়ের এই মানবিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।"