সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ব্যাপক গণ আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশে গদিচ্যুত হন শেখ হাসিনা। পতন ঘটে আওয়ামি লিগ সরকারের। ছাত্র-জনতার দাবি মেনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। যারা ইতিমধ্যেই এক মাস পার করে ফেলেছে। এই এক মাসে হাসিনাহীন বাংলাদেশে সংস্কার করতে নানা পদক্ষেপ করেছে ইউনুস সরকার। কিন্তু তাদের কাছে কি খুশি সাধারণ মানুষ? সমীক্ষা বলছে বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ নাগরিকই অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগ ও কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নন।
গণ অভ্যুত্থানের জেরে গত ৫ আগস্ট আওয়ামি লিগ সরকারের পতন হয়। এর পর ৮ আগস্ট ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেয়। এক মাসে সরকারের নেওয়া উদ্যোগ ও কার্যক্রম নিয়ে মানুষের মতামত জানতে ১০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা থেকে ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোয় সমীক্ষা চালানো হয়। যেখানে মোট ১ লক্ষ ৩ হাজার ৬৫৬ জন ভোট দিয়ে নিজেদের মতামত জানান। সমীক্ষার শেষে দেখা যায় নতুন সরকারের কাজে সন্তুষ্ট নন ৫১ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে, এই সরকারের নানা উদ্যোগে খুশি ৪৫%।
সরকারের গঠনের পর আর্থিক খাত সংস্কার ও দুর্নীতি দমনেও সরকার কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ ও প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। নির্বাহী আদেশে নয়, গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চুক্তি পর্যালোচনায় কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন খাতভিত্তিক নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করার ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার।
কিন্তু ইউনুস সরকার ক্ষমতায় আসার পর তবে বিভিন্ন জায়গায় ‘মব জাস্টিস’ (বিশৃঙ্খল জনগোষ্ঠীর বিচার) নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও নানা প্রশ্ন ওঠে। হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে হামলার শিকার হচ্ছেন আওয়ামি লিগ, ছাত্র লিগের নেতা-কর্মীরা। নিপীড়িত হচ্ছেন হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে চলা মব জাস্টিস, মন্দির ও মাজার ভাঙচুরের ঘটনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়’ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে নাগরিক কমিটি।
নাগরিক কমিটির দাবি, মানুষ যেসব আকাঙ্ক্ষা থেকে আন্দোলনে নেমে এসেছিল, সেসব আকাঙ্ক্ষা এখনও অধরা। যেকোনও ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের তৎপরতা খুবই মন্থর ও ধীরগতির। সরকারকে মনে রাখতে হবে, এই সরকার গণ–অভ্যুত্থানের সরকার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে যদি তারা বুঝতে না পারে, তা হবে দেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। বিশ্লেষকদের মতে, এই সুযোগকেই কাজে লাগাতে মাঠে নামবে বিএনপি, জামাতের মতো দল। ক্ষমতায় ফিরতে তারা জনমত গঠন করবে।