সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলাদেশে জুলাই বিদ্রোহের জেরে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষের। অবশেষে সেই মৃত্যুর দায় নিলেন দেশত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! সম্প্রতি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'দ্য হিন্দু'কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অতীতের সেই ভয়ংকর সময় স্মরণ করে হাসিনা জানালেন, বিদ্রোহের সময় নিরাপত্তাবাহিনী অবশ্যই কিছু ভুল করেছিল।
২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিব কন্যার বিদায়ের পর উপদেষ্টা সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন মহম্মদ ইউনুস। দীর্ঘ ১৫ মাস পর প্রথমবার কোনও সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিলেন হাসিনা। সেখানেই ভয়াবহ সে দিনের কথা স্মরণ করে হাসিনা বলেন, "সেই সময় কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে হিংসা রুখতেই পদক্ষেপ করেছিল নিরাপত্তাবাহিনী। নিরাপত্তাবাহিনীর কিছু সদস্য যেভাবে হিংসার বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছিলেন তা অবশ্যই ভুল ছিল। কিন্তু ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তাদের তরফে নেওয়া সিদ্ধান্ত সৎ উদ্দেশে ও প্রাণহানি কমানোর লক্ষ্যেই নেওয়া।" একইসঙ্গে হাসিনা বলেন, "যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের জন্য আমি শোকাহত। দেশের নেত্রী হিসেবে সেই মৃত্যুর দায় আমি নিচ্ছি। তবে আমি নিরাপত্তাবাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেইনি।" এছাড়াও ওই আন্দোলনে ১৪০০ জনের মৃত্যুর যে দাবি করা হচ্ছে তা ঠিক নয় বলে জানান হাসিনা।
জুলাই আন্দোলনের পাশাপাশি বাংলাদেশে হতে চলা জাতীয় নির্বাচন নিয়েও এদিন মুখ খুলেছেন হাসিনা। শোনা যাচ্ছে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। সে প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, "২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। নির্বাচন যদি হয়, তাহলেও এটি বৈধ হিসেবে স্বীকৃত হবে না কারণ আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।" যদিও হাসিনা তাঁর সমর্থকদের সহিংস বিদ্রোহের পথে না হেঁটে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেছেন। এমনকী নিজের আমলে নির্বাচন কারচুপির যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে হাসিনা বলেন, "২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছিল। আওয়ামি লিগ জনগণের ভোটে ৯ বার ক্ষমতায় এসেছিল, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো ক্ষমতা দখল করে নয়। নির্বাচনী স্বচ্ছতা রক্ষায় আমরাই ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা, ব্যালট বাক্স চালু করেছিলাম। ১৯৭০-এর দশক থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে নির্বাচন জালিয়াতি হয়েছিল, তা বন্ধ করা হয় নয়া ব্যবস্থায়।
এখানেই শেষ নয় হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকালে আনুমানিক ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুঠের অভিযোগ তুলেছে উপদেষ্টা সরকার। যে সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন হাসিনা। এইসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও হাস্যকর বলে উল্লেখ করে হাসিনা বলেন, "বাংলাদেশের মোট বাজেটই এত টাকা নয়। যদি এত টাকা লুঠ হত তবে গোটা দেশের অর্থনীতি ধসে যেত। অথচ আমার আমলে অর্থনীতি ৪৫০ শতাংশ বেড়েছে। আইএমএফ-সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের সেই স্বীকৃতি দিয়েছে।" বরং ইউনুসের বিরুদ্ধে তোপ দেগে হাসিনা বলেন, "১৯৯০ সালে ইউনুস মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর নামে হাজার হাজার কাঠা জমি। একাধিক ব্যাঙ্কে ৫ হাজার কোটি টাকা রয়েছে। যা নিয়ে সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন তোলে না। কারণ ওর পিছনে ওঁর বিদেশি বন্ধু ক্লিনটন (আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটন) রয়েছেন।
