সুকুমার সরকার, ঢাকা: শেখ হাসিনাকে নিয়ে দু'দেশের সম্পর্কে শৈত্য বজায় রয়েছে। বিস্তর টানাপড়েন চলছে কূটনৈতিক সম্পর্কে। কিন্তু ভাতের প্রশ্নে এখনও ভারতের উপরেই বেশি নির্ভরশীল বাংলাদেশ! তাই রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রেখেই এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২০২৫-'২৬ অর্থবর্ষে ভারত থেকেই ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল কেনা হবে।
বাংলাদেশের প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সোমবার অর্থ উপদেষ্টা সালেউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ভারত থেকে চাল কেনায় অনুমোদন দিয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন চালের জন্য ধরা হয়েছে ৩৫১.১১ মার্কিন ডলার। সব মিলিয়ে বরাদ্দ করা হয়েছে ২১৪ কোটি ৭০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬৫০ টাকা।
ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আগেই জানিয়েছিল, বাংলাদেশে শষ্য উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। এর জন্য ভারত-সহ একাধিক দেশ থেকে চাল আমদানির কথা ভেবেছে তারা। কোনও একটি দেশের উপর নির্ভরশীল না থাকতে চাইলেও, ভারত থেকে চাল আমদানি তুলনামূলক ভাবে সাশ্রয়ী বলেই তারা মনে করছে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, মায়ানমার থেকে টনপিছু চাল আমদানি করতে বাংলাদেশের খরচ হয় ৫১৫ ডলার। ইকোনমিক টাইম্স-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, ভিয়েতনাম থেকে চাল কিনতে বাংলাদেশের খরচ হয় ৫২১ ডলার। কিন্তু ভারত থেকে চাল কিনলে খরচ অনেক কম হয়। তাছাড়া ভৌগোলিক অবস্থান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেও ভারত থেকে চাল আমদানিতে খরচ তুলনামূলক ভাবে কম হয় বাংলাদেশের।
ভারতও আগে জানিয়ে দিয়েছিল, কূটনৈতিক সম্পর্কের উত্তাপ বাণিজ্যিক সম্পর্কে পড়বে না। এ নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে বৈঠকও হয়। বাংলাদেশের বিদেশসচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী। চাল আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এই নীতি দেখা গেলেও, আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে হাসিনা আমলের বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি নিয়ে আদালতে গিয়েছিল ইউনূসের প্রশাসন। ভারতকে ‘ব্যান্ডউইথ ট্রানজিট’ দেওয়ার সিদ্ধান্তও গত বছর প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। হাসিনার আমলে বাংলাদেশের ‘সামিট কমিউনিকেশনস’ এবং ‘ফাইবার অ্যাট হোম’, ভারতীয় কোম্পানি ‘ভারতী এয়ারটেল লিমিটেড’-এর সঙ্গে আখাউড়া থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত ট্রানজিট সংযোগ স্থাপনের অনুমতি চেয়ে বিটিআরসিতে আবেদন করেছিল। তাতে প্রাথমিক সম্মতিও মিলেছিল। কিন্তু ইউনূসের প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে ধাক্কা খেয়েছে ‘ভারতী এয়ারটেল লিমিটেড’।
