সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে টাকার উপর আর থাকছে না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি! ইদ সামনে রেখে নতুন করে নোট ছাপানোর উদ্যোগ নিয়েছে ড. মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। শেখ হাসিনা গদিচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়ার পর থেকেই টাকা উপর থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে ফেলার দাবি তোলা হচ্ছিল। এবার সেই পদক্ষেপই করতে চলেছে নয়া সরকার। নোটের মজুত বাড়ানোর আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক। বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে নতুন নোট ছাপানোর প্রস্তাব সরকারকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের একজন আধিকারিক।
বর্তমানে বাজারে থাকা বিভিন্ন মূল্যের নোট একই নকশায় ছাপতে, বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়া আগের নোট ছাপাতে কত খরচ ও সময় লাগবে, তার তুলনামূলক তথ্য অর্থ মন্ত্রককে দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ছাড়া নোট ছাপার কাজ শুরু হবে। ইদ পর্যন্ত কী পরিমাণ নোটের চাহিদা থাকতে পারে তা নিয়ে সম্প্রতি বৈঠকে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট কমিটি। আর অর্থ মন্ত্রক নতুন নকশায় নোট ছাপানোর বিষয়ে আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিল। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক জানান, “বাজারে ছোট আকারের নোটের চাহিদা আছে। আগামী ইদের সময়ে নতুন টাকার নোট লাগবে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মুদ্রা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক হয়েছে। নোটের নকশা নিয়ে সিদ্ধান্ত সরকার নেবে।”
বাংলাদেশের মুদ্রা ছাপানোর কাজটি করে দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড, যা টাঁকশাল নামে পরিচিত। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৮৮ সালের জুন মাসে এক টাকা ছাপানোর মধ্য দিয়ে এই প্রেসের নোট ছাপানো শুরু হয়। ওই বছরের নভেম্বর মাসে ১০ টাকার নোটও ছাপানো হয় সেখানে। প্রতিটি নোট ছাপানোর আগে এর নকশা অনুমোদন করে সরকার। সেজন্য দরপত্র ডেকে চিত্র শিল্পীদের দিয়ে নোটের নকশা করানো হয়। নকশা চূড়ান্ত হলে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কাগজ, কালি ও প্লেট তৈরি করা হয়। নকশা অনুযায়ী বিদেশ থেকে প্লেট তৈরি করে আনার পর ছাপার কাজটি করে টাকশাল। নতুন প্রক্রিয়ায় টাকা ছাপতে গেলে ১৮ থেকে ২০ মাসের মত সময় লাগবে। আর পুরনো নকশায় ছাপালে সেটা ছয় মাসের মধ্যে সম্ভব বলে জানান ওই আধিকারিক। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক সব সময় টাকা ছাপায় না। সাধারণত একটি নোট ৪-৫ বছর চলে। এর পর তা পুনঃমুদ্রন করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে নতুন নোট ছাপতে। তার আগের অর্থবছরে খরচ ছিল ৩৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। নতুন নকশায় ২০০ টাকার নোট চালু হয় ২০২০ সালে। ওই নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবিতে নতুন রূপ দেওয়া হয়। আগে ছাপানো নোটে ব্যবহৃত বঙ্গবন্ধুর ছবি বাদ দিয়ে আরও স্পষ্ট করে দুধরনের ছবি ব্যবহার করা হয় ২০২০ সাল থেকে। এরপ র ছাপানো সব নোটে ওই দুধরনের ছবিই ব্যবহার করা হয়েছে।