সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পড়ুয়াদের আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। সঙ্গে সঙ্গে পতন হয় আওয়ামি লিগ সরকারের। তার পরই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। এই প্রথম নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই বেশ কয়েকবারই সামরিক অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
যে তালিকার শুরুতেই রয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। মেজর শরিফুল হক (ডালিম) বীর উত্তম, মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান এবং মেজর রশিদের নেতৃত্বে প্রথমবার সামরিক অভ্যুত্থান হয় বাংলাদেশে (Bangladesh)। এই অভ্যুত্থানেরই ফলশ্রুতি বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের হত্যা। খুন হতে হয় তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। কেবল দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময় জার্মানিতে থাকার কারণে তাঁরা বেঁচে যান। সেবারের অভ্যুত্থানে প্রাণ যায় কয়েকজন মন্ত্রী ও আওয়ামি লিগের নেতাদেরও।
[আরও পড়ুন: সেনাশাসন নয়, ‘দেশ গড়তে’ ইউনুসকেই চাইছে বাংলাদেশের আন্দোলনকারীরা]
সেই অভ্যুত্থানের আড়াই মাস পরই ৩ নভেম্বর সেনার গড়া সরকারও ভেঙে যায় আরও এক অভ্যুত্থানে। এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল খালেদ মোশারফ বীর উত্তম। বন্দি করা হয় সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে। কিন্তু তা চারদিনের বেশি স্থায়ী হয়নি। ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে মুক্ত করে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যরা। খুন হন খালেদ মোশারফ। জিয়াউর রহমান ২১টি অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছরের শাসনকালে সেগুলি সামাল দিতে পারলেও ২২ নম্বর অভ্যুত্থানে মারা যান তিনি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে তাঁর মৃত্যুর পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন আব্দুস সাত্তার। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ আব্দুস সাত্তারের সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেন সেই সময় সেনাপ্রধানের দায়িত্বে থাকা প্রধান লেফটেন্য়ান্ট জেনারেল হুসেন মহম্মদ এরশাদ। ১৯৯১ সালে তাঁর পতনের পর বাংলাদেশে ফের নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরে আসে।
[আরও পড়ুন: চৈনিক চালেই হাসিনার পতন, বাংলাদেশে ‘অভ্যুত্থানে’র নেপথ্যে ISI!]
১৯ মে, ১৯৯৬। লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু সালেহ মহম্মদের নেতৃত্বে ফের সেনা অভ্যুত্থান ঘটলেও পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশে জারি হয় জরুরি অবস্থা। রাজনৈতিক ক্ষমতা সরাসরি অবশ্য সেনার হাতে যায়নি। কিন্তু তাদের মনোনীত অসামরিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তৈরি করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অর্থাৎ সেই সরকার ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার'। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পরবর্তীতে এটিকে ওয়ান ইলেভেন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
এর পর ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ রাইফেলসের বিদ্রোহ। যদিও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। শেষপর্যন্ত অস্ত্র সমর্পণের মধ্যে দিয়ে অবসান ঘটে বিদ্রোহের। এর পর ২০১২ সালে বাংলাদেশে ইসলামিক আইন চালুর পরিকল্পনা করা হলেও সেটি ব্যর্থ হয়। একযুগ পরে ফের সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী হল দেশ। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের হাতেই রয়েছে প্রশাসনের দায়িত্ব।