সুকুমার সরকার, ঢাকা: ত্রয়োদশ সংশোধনী বৈধ ঘোষণা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার যে রায় এসেছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে এর কাঠামো পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্ধারণ করবে বলে। তবে জুলাই জাতীয় সনদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন পদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে। সনদ বাস্তবায়নের গণভোটেও বিষয়টি থাকছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে 'হ্যাঁ' জয়ী হলে পুরনো পদ্ধতিতে নির্বাচনের সময়ের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা যাবে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর করা জুলাই জাতীয় সনদ অনুযায়ী স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা, বিরোধীদল থেকে ডেপুটি স্পিকার এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রতিনিধিকে নিয়ে গঠিত কমিটি দশ ধাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই করবে। তবে এই পদ্ধতির দুটি ধাপ সম্পর্কে বিএনপি-সহ সমমনস্ক সাতটি দলের নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) রয়েছে। তাঁদের দাবি, কমিটি প্রধান উপদেষ্টা পদে কাউকে বাছাই করতে না পারলে তখন কী হবে, সেই পদ্ধতি আগামী সংসদে ঠিক হবে। অন্যদিকে, জুলাই সনদে বলা হয়েছে, ১০ ধাপের পরও প্রধান উপদেষ্টা পদে কাউকে পাওয়া না গেলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে। এক্ষেত্রে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হবেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে সনদে শর্ত অনুযায়ী কোনওভাবেই রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা হতে পারবেন না।
বিএনপির ভিন্নমত থাকলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতি গণভোটে থাকছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে রিভিউ মামলায় ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'এবারের নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক থাকছে না তা আদালতের রায়ে স্পষ্ট।' জুলাই সনদ অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ বা অন্য কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এসময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হবে। মেয়াদ শেষের ১৫ দিন আগে এবং অন্য কারণে সংসদ ভাঙলে পরের ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হবে। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব না হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৩০ দিন বাড়তি সময় পাবে। তবে ওই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতেই হবে। নতুন সংসদ গঠন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে। আদালতও বলেছেন, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে।
জুলাই সনদ অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ শেষের ৩০ দিন আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি গঠন হবে। অন্য কোনও কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি গঠন হবে। দুই ক্ষেত্রেই স্পিকারের তত্ত্বাবধানে কমিটির সদস্য হবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের ডেপুটি স্পিকার এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রতিনিধি। গঠনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটির কাছে প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য একজন করে ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সংসদে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে এমন দল এবং নির্দল সাংসদরা। এই ধাপের ক্ষেত্রেই নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলন। তাঁরা বলেছে, শুধু নিবন্ধিত নয়, সব দলকে নাম প্রস্তাবের সুযোগ দিতে হবে।
বাছাই কমিটিতে বিচারকদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং র্যাঙ্কড চয়েস ভোটে রাজি নয় বিএনপি। তাঁরা বলছে, ৪-১ ভোটে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই সম্ভব না হলে কী হবে, তা আগামী সংসদে আলোচনায় ঠিক করা হবে। সনদে বলা হয়েছে, র্যাঙ্কড চয়েস ভোটেও সমাধান না হলে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ হবে। প্রথমে না হলে র্যাঙ্কড চয়েস ভোটে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যক্তিকে নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, নোট অব ডিসেন্টের নামে বিষয়টিকে সংসদে নিয়ে এমন পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না যাতে কোনও দলের কবজায় চলে যায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ছাত্রদের দল এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, ত্রয়োদশ সংশোধনীর মতো নয়; সনদে যেভাবে আছে সেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়োগ করতে হবে।
