সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রবল চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। ইস্তফা দেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার-সহ নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্য। এবার প্রাণ বাঁচাতে পদত্যাগ করলেন মানবাধিকবার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ-সহ সকল সদস্যরা! রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তাঁরা। এই আবহে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। কার্যত ভয় বা আতঙ্কের পরিস্থিতি বিরাজ করছে গোটা দেশজুড়ে। এমনটাই মত বিশ্লেষকদের একাংশের।
কী কারণে হঠাৎ এই পদত্যাগ? যদিও এনিয়ে খোলসা করে কিছুই বলতে চাননি মানবাধিকবার কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান সংবাদমাধ্যমে বলেন, “পুরো কমিশন বৃহস্পতিবার দুপুরে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কাছে পাঠানো হয়।” কিন্তু ইস্তফা দেওয়ার কারণ নিয়ে তিনিও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এদিকে, রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া কামাল উদ্দিনের ইস্তফাপত্রে লেখা রয়েছে, 'চেয়ারম্যান হিসেবে আমি আমার পদ থেকে অব্যাহতি চাইছি। তাই আজ আমি আমার পদত্যাগপত্র জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯ এর ৬ (৪) ধারার বিধান অনুযায়ী আপনার কাছে জমা দিলাম। এই পদত্যাগপত্র গ্রহণের বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।' একইভাবে ইস্তফা দেন কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ আবদুল হামিদ এই মানবাধিকার কমিশনকে নিয়োগ করেছিলেন। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রীর গদি থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ক্ষমতায় আসে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে হাসিনার জমানার নিয়োগপ্রাপ্তদের ছেঁটে ফেলার প্রক্রিয়া। যে কারণে সুপ্রিম কোর্টের ‘হাসিনাঘনিষ্ঠ’ প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের উপরেও লাগাতার চাপ বাড়ছিল। প্রবল চাপে তিনিও বাধ্য হন ইস্তফা দিতে। এর পর 'কোপ' পড়ে নির্বাচন কমিশনের উপর। এবার মানবাধিকার কমিশন। এনিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিশনের এক সদস্য বলেন, "পরিবার নিয়ে নিরাপদে থাকতে চাই। তাই ইস্তফা দিয়েছি। না হলে যেকোনও সময় মরে যেতাম।"
উল্লেখ্য, হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই আওয়ামি লিগের নেতাকর্মীরা নানা হামলা-অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। কয়েকজনকে পিটিয়ে মারারও অভিযোগ উঠেছে। নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা। যা উঠে এসেছিল মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে। চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবারও কমিশনের মাসিক রিপোর্টে অক্টোবর মাসের গণপিটুনি, ধর্ষণ-সহ অন্যান্য অপরাধ বাড়ার কথা বলা হয়। এছাড়া পূর্ব শত্রুতা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে মামলা, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও হিংসতার ঘটনাও প্রকাশ পায় রিপোর্টে। এর দুদিন পরই পদত্যাগ করেন চেয়ারম্যান-সহ কমিশনের সকল সদস্য।