সুকুমার সরকার, ঢাকা: গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার বিক্ষোভ দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা এবং প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরত চেয়ে ভারতের কাছে ফের চিঠি পাঠাল মহম্মদ ইউনুসের অন্তবর্তী সরকার। রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ইউনুস সরকারের বিদেশ উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরত চেয়ে ভারতের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাস মারফত ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি নয়াদিল্লি।
এর আগেও শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরাতে নয়াদিল্লিকে চিঠি দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। সেই বিষয়ে তৌহিদ বলেন, হাসিনাকে ফেরাতে যে চিঠি আগেই দেওয়া হয়েছিল, তার জবাব এখনও আসেনি। যদিও এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। কারণ শাস্তি দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে। তাদের (ভারত) সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। ফলে তাঁকে (হাসিনাকে) ফেরত আনতে অফিসিয়ালি আমরা চিঠি দেব। উল্লেখ্য, গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। তার পর থেকে তিনি ভারতেই সাময়িক আশ্রয়ে রয়েছেন। আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতে রয়েছেন বলেই খবর। উভয়ের বিরুদ্ধে জুলাইয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়। এরপর বাংলাদশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গত ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
হাসিনার বিরুদ্ধে এই রায়ের পরই প্রশ্ন উঠছিল, এবার ভারতের অবস্থান কী হবে? বিশেষজ্ঞদের মতে, জনমত ছাড়া গঠিত বাংলাদেশের নতুন সরকারের আবেদনকে ভারত মান্যতা দেবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০১৩ সালে ভারত-বাংলাদেশের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়েছিল, সেখানে বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক অপরাধে দোষী সাব্যস্ত কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ আবেদন খারিজ করার অধিকার দু’দেশেরই রয়েছে। সুতরাং ভারত যে চুক্তি অনুয়ায়ীই চলবে সেটা এক প্রকার স্পষ্ট বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জুলাই অভ্যুত্থানে দেশছাড়া হওয়ার পর থেকে মহম্মদ ইউনুসের বাংলাদেশে অসংখ্য মামলা হয়েছে হাসিনার বিরুদ্ধে। গুরুতর মামলাগুলির মধ্যে রয়েছে জুলাই বিপ্লবী ছাত্রদের উপর গুলি চালানো তথা মানবতাবিরোধী অপরাধ, আয়নাঘর সংক্রান্ত অভিযোগ ইত্যাদি। এদিন বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি মহম্মদ শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মহম্মদ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর ট্রাইবুনাল বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করে। এরপরই সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় হাসিনাকে। যদিও আওয়ামি লিগ আগেই জানিয়েছে, জামাত প্রভাবিত ‘ক্যাঙারু আদলতে’ বিচারের নামে প্রহসন চলছে। যেখানে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নেই, তা কখনই ন্যায় বিচার হতে পারে না।
