সংবাদ প্রতিদিন ডেস্ক: রবিবারই বুড়িগঙ্গার জলে সলিল সমাধি হয়েছে বিপ্লবের! রাখঢাক উড়িয়ে জামাতের সঙ্গে জোট ঘোষণা করেছে ছাত্রদের দল এনসিপি। যদিও জামাতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট নিয়ে দলের অন্দরে শুরু হয়েছে কোন্দল। এখনও পর্যন্ত দলটির অন্তত পাঁচজন শীর্ষনেতা পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়া জামাতের সঙ্গে জোট নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ৩০ নেতা চিঠি দিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে। উলটো দিকে রবিবার রাত অবধি জামাতের সঙ্গে জোটকে সমর্থন করেছেন এনসিপির ১১৪ জন কেন্দ্রীয় নেতা।
বাংলাদশে নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহদের সঙ্গে দড়ি টানাটানি চলছিল জামাতের। শেষ পর্যন্ত বিপ্লবের মুখোশ খুলে ফেলল ‘বিপ্লবী’রা। রবিবার জামাতের আমির শফিকুর রহমান জানান, গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি ও কর্নেল অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এলডিপি জামাতের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিয়েছে। পরে এই বিষয়ে নিশ্চিত করা হয় এনসিপির তরফ থেকেও। এরপরেই কট্টরপন্থী জামাতের সঙ্গে জোটে আপত্তি জানিয়ে একের পর এক এনসিপি নেতা পদত্যাগ করেন।
যদিও একাধিক পদত্যাগে দলে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। এদিন দলটি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জামাতের সঙ্গে জোটের বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে একথা বলেন।
জামাতের সঙ্গে এনসিপির জোট বিরোধিতা করে গতকাল পর্যন্ত এনসিপির পাঁচ নেতা পদ ছাড়লেও তাসনিম জারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
পদত্যাগ করা নেতাদের বক্তব্য, সাম্প্রতিক সময়ে এনসিপি যে রাজনৈতিক সমঝোতা করেছে, তা নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে দল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা। সবার আগে পদত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মির আরশাদুল হক। এরপর ঢাকা-৯ আসনের প্রার্থী ও দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনুভা জাবিন, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও দলটির নেতা এবং ফেনি-৩ আসনে সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আবুল কাশেম পদত্য়াগ করেন।
এনসিপির প্রাক্তন যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা পদত্যাগের কারণ হিসাবে ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য করেছেন। ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, এনসিপি-জামাত জোটের প্রক্রিয়া রাজনৈতিক কৌশল হলেও বাস্তবে এটি ধাপে ধাপে সাজানো একটি পরিকল্পনা। প্রশ্ন উঠছে, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পাকিস্তানপন্থী বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনার কথাই বলছেন তাজনুভা? পদ্মাপাড়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তেমনটাই মনে করছেন। এদিকে নতুন দল গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন মাহফুজ আলম। তিনি ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, এনসিপি-জামাত জোটে থাকবেন না। বিকল্প দল গড়ার ইঙ্গিত দিয়ে সমর্থকদের যোগদানের আহ্বানও জানান।
প্রসঙ্গত, গত বেশ কয়েক মাস ধরেই নাহিদ ইসলাম বলে আসছিলেন যে, এনসিপি এককভাবে নির্বাচন লড়বে। সেই লক্ষ্যে প্রথমপর্বে ১২৫টি আসনে প্রার্থীও দেয় তারা। পরে ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠন করার কথা ঘোষণা করে তারা। সেই লক্ষ্যে জামাতের সঙ্গে জোট বাঁধার কথাও জানানো হয়। চলছিল আসন নিয়ে দর কষাকষি। জামাতের কাছে ৫০টি আসন চায় এনসিপি। যদিও ৩০টির বেশি আসন এনসিপিকে ছাড়তে রাজি হয়নি মৌলবাদী দলটি। এই অবস্থায় অস্বস্তির মুখে পড়েছিল ছাত্রদের দল। কারণ তারা আগেভাগে যে ১২৫ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল, তাঁদের অনেকেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। ফলে জোট গঠনের পর কোনও ছাত্রনেতার দল ছাড়ার ইঙ্গিত ছিলই। তেমনটাই ঘটতে শুরু করেছে। জামাতের 'বি-টিমে'র অন্দরে।
