সুকুমার রায়, ঢাকা: দ্বেষের আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ (Bangladesh Unrest)। বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহে দীপু দাস নামে এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে খুন করেছে কট্টরপন্থীরা। জনসমক্ষে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁর দেহ। নারকীয় এই ঘটনায় কেঁপে উঠেছে গোটা বিশ্ব। দীপু হত্যাকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, নৃশংস এই ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে নিহতের পরিবার। “ছেলেকে কেন পুড়িয়ে মারা হল!”, আর্তনাদ দীপুর বাবা রবি চন্দ্র দাসের।
ময়মনসিংহের মোকামিয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা দীপু গত দু'বছর ধরে ভালুকার একটি কারখানায় কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ কারখানায় হঠাৎ একদল বিক্ষোভকারী চড়াও হন। চলে ভাঙচুর। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, টেনে হিঁচড়ে কারখানার বাইরে বের করে আনা হয় দীপুকে। তারপর গণপিটুনি দেওয়া হয় তাঁকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দীপুর। এরপর তাঁর দেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতা। গাছে বেঁধে ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। সঙ্গে চলে স্লোগান। গোটা ঘটনায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাস্তা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু কী কারণে তাঁকে খুন করা হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সূত্রের দাবি, ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরেই খুন করা হয়েছে দীপুকে। যদিও তা মানতে নারাজ নিহতের পরিবার।
দীপু দাসের পরিবার।
গোটা ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দীপুর পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন। শোকে কাতর তাঁর বাবার কথায়, "আমার ছেলের কী দোষ ছিল? তাঁকে এভাবে পুড়িয়ে মারা হল কেন? কারও বিশ্বাসে আঘাত করলে দেশে তো আইন ছিল, সেই আইনে বিচার হতো। আমরা গরিব বলেই কি ছেলের জীবন রক্ষা করতে পারলাম না?" নিহতের বড় বোন চম্পা দাস এই ঘটনাটিকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, "আমার ভাই শিক্ষিত মানুষ। ধর্ম নিয়ে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান আছে। সে এমন কাজ করতেই পারে না। আমি শুনেছি, কারখানায় উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। এ কারণেই তাঁকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।" তাঁর প্রশ্ন, "কারখানার লোকজন কেন ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিল না? তাঁরা কেন তাকে উন্মত্ত জনতার হাতে তুলে দিল?" দীপুর স্ত্রী মেঘনা রানি তাঁর একমাত্র সন্তানকে নিয়ে দিশেহারা। কাতর কণ্ঠে বলেন, "আমার স্বামীই ছিল বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।"
