সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জঙ্গির শেষকৃত্যে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মহাসমারোহ। এ ঘটনা পাকিস্তানে নতুন কিছু নয়, এবার সেই দৃশ্যই দেখা গেল বাংলাদেশের (Bangladesh) কট্টরপন্থী, মৌলবাদী, ভারতবিদ্বেষী, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির শেষকৃত্যে। রাষ্ট্রীয় সম্মান, লক্ষ মানুষের ভিড়, আয়োজনে বাদ ছিল না কোনও কিছুই। শুধু তাই নয়, প্রবল বিতর্ক সত্ত্বেও বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই কবর দেওয়া হয় হাদিকে।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, শনিবার বেলা ৩টে ৫০ নাগাদ ঢাকায় নজরুল ইসলামের কবরের পাশে কবর দেওয়া হয় হাদিকে। এর আগে বাংলাদেশের সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা সম্পন্ন হয়। বেলা ২টো নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সে করে দেহ আনা হয় সংসদ ভবনে। সেখানে উপস্থিত হন প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। এরপর লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ নেন এই জানাজায়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে ইউনুস বলেন, "হাদি, তুমি চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থাকবে। আমরা কেউ তোমায় ভুলব না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের সঙ্গে থাকবে তুমি।"
প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্যান্য শীর্ষ আধিকারিক ও রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্বরা। সংসদ ভবনের চারপাশে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। তবে একজন মৌলবাদীকে ঘিরে এত আয়োজন ও সরকারি উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানে মৃত জঙ্গিদের শেষকৃত্যের ঘটনার। সেবারও শতাধিক জঙ্গির মৃত্যুর পর রাষ্ট্রের উদ্যোগে শেষকৃত্যের আয়োজন করে পাক সরকার। যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আসিম মুনির-সহ পাকিস্তানের শীর্ষ সেনাকর্তারা। যেখানে জানাজা পড়তে দেখা যায় লস্কর জঙ্গি আবদুল রউফকে। অতীতের পাকিস্তানের সেই ছবির সঙ্গে মৌলবাদের কবলে চলে যাওয়া বাংলাদেশের এই ছবির কোনও পার্থক্য নেই বলে মনে করছেন বিদ্বজনেরা।
উল্লেখ্য, জুলাই আন্দোলনে উত্থান ওসমান হাদির (Osman Hadi)। পরে আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলনে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। হাসিনা ও আওয়ামি বিরোধিতার পাশাপাশি ছাত্র নেতার অন্যতম এজেন্ডা ছিল ভারত বিরোধিতা। উত্তরপূর্ব ভারতের বেশ কিছু অংশ জুড়ে ‘গ্রেটা’র বাংলাদেশের ম্যাপ প্রকাশ করে বিতর্ক উসকে দিয়েছিলেন হাদি। গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার রাস্তায় অজ্ঞাত আততায়ীদের গুলিতে গুরুতর জখম হন তিনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বৃহস্পতিবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
হাদির মৃত্যুর পর নতুন করে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ (Bangladesh Violence)। বৃহস্পতিবার রাতে দেশের দুই সংবাদমাধ্যম, ভারতীয় দূতাবাস, সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট, আওয়ামি লিগের অফিসে হামলা হয়। উত্তেজিত জনতা চট্টগ্রামে খুন করে এক সাংবাদিককে। এক সংখ্যালঘু যুবককে হত্যা করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, যারা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংগঠন ছায়ানটকে ধ্বংস করে, রবীন্দ্রনাথের ছবিতে আগুন দেয়, তাদের নেতা কি কাজী নজরুল ইসলামের মতো ধর্মনিরেপক্ষ উদার কবির পাশে দাফনের যোগ্য?
