সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গণপিটুনি দিয়ে হত্যার পর দীপুর দেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুন জ্বালিয়েও খান্ত হয়নি বর্বরের দল। পোড়া মুণ্ডু ও ধড় প্রকাশ্যে বেঁধে রাখে মৌলবাদী 'পশু'র দল। ছেলের মর্মান্তিক সেই পরিণতির বর্ণনা দিলেন দীপুচন্দ্র দাসের বাবা রবিলাল দাস। দীপুর এমন পরিণতিতে শুধু তাঁর পরিবার নয় আতঙ্কিত বাংলাদেশে থাকা সমস্ত হিন্দু সম্প্রদায়।
শনিবার এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন রবি। তিনি বলেন, "ছেলের এমন পরিণতির কথা আমরা প্রথমে ফেসবুক থেকে জানতে পারি। পরিচিতদের মধ্যে এই বিষয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। ঘটনার আধঘণ্টা পর আমার এক কাকা এসে খবর দেন আমার ছেলেকে ওরা ধরে নিয়ে গিয়েছে এবং গাছে বেঁধে রেখেছে।" হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে দীপুর বাবা বলেন, "পিটিয়ে মারার পর ছেলের দেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ওরা। এরপর সেই পোড়া মাথা ও দেহ দড়ি দিয়ে বেঁধে বাইরে ফেলে রাখা হয় যাতে সকলে সেই নারকীয়তার সাক্ষী হয়। সে দৃশ্য ছিল অত্যন্ত ভয়ংকর।"
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রবি। এমন ঘটনার পরও সরকারের তরফে কোনও শোকবার্তা বা পাশে থাকার আশ্বাসটুকু দেওয়া হয়নি। রবি বলেন, "এই ঘটনার পরও সরকার আমাদের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ করেনি। নিরাপত্তার আশ্বাসটুকুও দেয়নি। কারও মুখ থেকে কোনও শোকবার্তা পাইনি আমরা।"
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির। এই ঘটনার পরই ভয়ংকর হিংসা ছড়ায় গোটা বাংলাদেশে। এরই রোষ গিয়ে পড়ে দীপু নামে ওই সংখ্যালঘু হিন্দু যুবকের উপর। ময়মনসিংহের মোকামিয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা দীপু গত দু'বছর ধরে ভালুকার একটি কারখানায় কর্মরত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ কারখানায় হঠাৎ একদল বিক্ষোভকারী চড়াও হন। চলে ভাঙচুর। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, টেনে হিঁচড়ে কারখানার বাইরে বের করে আনা হয় দীপুকে। তারপর গণপিটুনি দেওয়া হয় তাঁকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দীপুর। এরপর তাঁর দেহ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতা। গাছে বেঁধে ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। সঙ্গে চলে স্লোগান। গোটা ঘটনায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাস্তা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু কী কারণে তাঁকে খুন করা হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সূত্রের দাবি, ধর্ম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরেই খুন করা হয়েছে দীপুকে। যদিও তা মানতে নারাজ নিহতের পরিবার।
