সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিস্তর টালবাহানার পর অবশেষে ভারতকে ইলিশ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেটা উপহার হিসাবে নয়। নিতান্তই ব্যবসায়িক স্বার্থে। এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলসম্পদ মন্ত্রকের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। শেখ হাসিনাহীন বাংলাদেশে খানিক বদলে গিয়েছে সৌজন্যের রীতিও। এতদিন দুর্গাপুজোয় উপহার হিসাবে ইলিশ যেত ভারতে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে জানায়, তারা আর পুজোয় ইলিশ দেবে না ভারতকে। তার পরই টালবাহানার শুরু। শেষমেশ ইলিশ রপ্তানির নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রক।
সোমবার এই প্রসঙ্গে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, "এই ইলিশ উপহার হিসেবে যাচ্ছে না, ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে। রপ্তানির টাকা বাংলাদেশ সরকার পাবে। সেটা খুব ছোট করে দেখার মতো টাকা নয়। যারা এই ইলিশ চাইছেন তাদের অনেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন। তবে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ এখনও যায়নি। শুধু একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার আগেই তো দাম বেড়ে গিয়েছে। কাজেই রপ্তানি হলে দাম বাড়বে এ কথাটা ঠিক না। আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, প্রতিবেশীর সঙ্গে অনেক বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। সেই আলোচনার ধারাটা ছোট ছোট বিষয়ে বন্ধ হয়ে যাক, সেটা আমরা চাই না।"
দুর্গাপুজো উপলক্ষে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানিতে যে অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা ঠেকাতে আইনি নোটিস দিয়েছেন এক আইনজীবী। রবিবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মহম্মদ মাহমুদুল হাসান নোটিসটি পাঠিয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আমদানি-রপ্তানির কার্যালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রককে নোটিসের জবাব দিতে বলা হয়েছে। দুর্গাপুজো শুরুর দুসপ্তাহ আগে শনিবার ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রক।
এদিকে, ভারতে যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা চাঁদপুর ঘাটের একদিনের ইলিশও নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, "তিন হাজার টন রপ্তানির কথা বলা হয়েছে। আপনি দেখুন, ৫ লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ হয়। তিন হাজার টন চাঁদপুর ঘাটের একদিনের পরিমাণের চেয়েও কম। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। ইলিশ রপ্তানিতে বাণিজ্যিক সুবিধা আছে। বিদেশি মুদ্রা আসে। রপ্তানি না করলে ইলিশের চোরাচালান হয়। ফলে অনেক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।" ফলে এবার নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থেই ভারতকে ইলিশ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। বিশ্লেষকদের মতে, পড়শি দেশে বড় লগ্নি রয়েছে ভারতের। ইতিমধ্যে কয়েকলক্ষ টন ডিম ঢাকাকে রপ্তানি করেছে দিল্লি। দেওয়া হচ্ছে পিঁয়াজও। ফলে ইলিশের জন্য ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না মহম্মদ ইউনুসের সরকার।