সুকুমার সরকার, ঢাকা: দুর্গাপুজোয় শুধু পাঁচদিন ধরে উৎসব উদযাপনই নয়। দুর্গাপুজোয় বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা গোপালগঞ্জের জলিরপাড় ইউনিয়নের অন্যতম সঙ্গী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। দশমী বা বিসর্জনের পরদিন নৌকাবাইচ না হলে যেন দুর্গোৎসব পূর্ণই হয় না, এটাই এই এলাকার বিশ্বাস। তাই প্রতি বছরের মতো এবছরও দশমীর পরদিন রবিবার গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার জলিরপাড়ে দুশো বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জলিরপাড়ের অদূরেই দুই বাংলার ওড়াকাণ্ডিতে অবস্থিত মতুয়া সম্প্রদায়ের আদিপিঠস্থান পি আর ঠাকুরের বাড়ি। এলাকাবাসী, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এদিন বিকালে উপজেলার জলিরপাড় কুমার নদে এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা হয়। এই নৌকাবাইচে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ১০টি সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, চিলাকাটা, জয়নগর বাছারি নৌকা অংশ নেয়। গ্রাম বাংলার অতি প্রাচীন কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে হাজারো প্রাণের আনন্দ উচ্ছলতায় কুমার নদের জলিরপাড় গ্রাম থেকে কলিগ্রাম ও শান্তিপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এ নৌকাবাইচ হয়।
এখানে বাড়তি আকর্ষণ নৌকা ও ট্রলারে আনন্দ উপভোগ। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে এই নৌকাবাইচ শুরু হয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষ নদীর দুপাড়ে দাঁড়িয়ে এই প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। বিকাল থেকে নানা বর্ণে ও বিচিত্র সাজে সজ্জিত দৃষ্টি নন্দন এসব নৌকা তুমুল বাইচ শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নৌকাবাইচের একের পর এক ছোপ। নদীর দুকূলে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষ হুল্লোরে মাতিয়ে তোলেন চারপাশ।
নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে জলিপাড় ও রথখোলা এলাকায় বসে মেলাও। থাকে শতাধিক স্টল বসেছিল। সেখানে মুড়ি, মিষ্টি, কুটির শিল্পের নানা পণ্য খেলনা-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি হয়। এদিনের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় উপজেলার কাশালিয়া ইউনিয়নের চকসিং নয়াকান্দি গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী জন শ্রীকান্ত বিশ্বাসের নৌকা এবং দ্বিতীয় হয় সাবেক ননীক্ষীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মজিবর রহমানের নৌকা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহম্মদ আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিভা রানী মণ্ডল, গোহালা ইউপির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। পরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।