সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলাদেশেই ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরি করতে চলছে চিন। কয়েকদিন আগেই বেজিংয়ে গিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। সেখানেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ভারতের পূর্ব প্রান্তের সাতটি রাজ্য, যাদের সেভেন সিস্টার্স বলা হয়। ওই বিরাট অঞ্চল কিন্তু পাহাড় আর স্থলভাগে ঘেরা। সমুদ্রপথে যোগাযোগ করার উপায়ই নেই তাদের। বাংলাদেশই হল সমুদ্রপথের রাজা। তাই ওই এলাকায় চিনা অর্থনীতির বিস্তার ঘটতেই পারে। এতেই কূটনীতিকরা বলছেন, চিনের জন্য ভারত মহাসাগরের পথ খুলে দেবেন ইউনুস। সেই জন্যই কি ঢাকাকে হাসপাতাল উপহার দিচ্ছে বেজিং?

শেখ হাসিনাহীন বাংলাদেশে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে রাজনৈতিক চিত্র। পালটে গিয়েছে কূটনৈতিক নীতিও। পদ্মাপাড়ে এখন ভারত বিরোধী হাওয়া। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই আসরে নেমেছে চিন, পাকিস্তান। আগে শোনা গিয়েছিল, দিল্লিকে টেক্কা দিতে চিন খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশিদের জন্য হাসপাতাল বানাবে। চিনা শহর কুনমিংয়ে তিনটি হাসপাতালকে বাংলাদেশিদের জন্য মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান, বাংলাদেশে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল করবে চিন। হাসপাতালটি হবে উত্তর জনপদ জেলা রংপুরে। জমি খোঁজা চলছে।
জানা গিয়েছে, চিন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বেজিং উপহার হিসেবে এই হাসপাতালটি নির্মাণে অর্থায়ন করবে। নূরজাহান বেগম আরও বলেন, বাংলাদেশে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার উইথ রোবোটিক ফিজিওথেরাপি সাপোর্ট ফ্যাসিলিটি দিচ্ছে চিন সরকার। বাংলাদেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত হবে। বর্তমানে এর যন্ত্রপাতি চট্টগ্রাম বন্দরে রয়েছে। রোবোটিক ফিজিওথেরাপি সাপোর্ট ফ্যাসিলিটি থেকে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থানে'র আহতরা চিকিৎসা পাবেন। আহতদের পুনর্বাসনের চিন সরকার এটি সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে। এখন জুলাইয়ে আহতদের জন্য ব্যবহার হলেও পরে যাদের প্রয়োজন হবে, তাদের জন্য হাসপাতালটি ব্যবহার করা যাবে। এতে দেশে ফিজিওথেরাপিও ভিন্ন মাত্রা পাবে। সূত্রের খবর, বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণ-সহ স্বাস্থ্য খাতে বড় বিনিয়োগ করতে চলেছে চিন। হাসপাতালের নাম ‘চিন-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল' রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, উত্তর জনপদ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন আম কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চিন। শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি আমবাগান পরিদর্শন করেন চিনের আমদানিকারক মি. শু উই। আমবাগানগুলো দেখে খুব পছন্দ করেন তিনি। পরে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার অ্যাকাডেমি মোড়ে আম গ্রেডিং, শর্টিং ও শোধন কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন। এর ফলে ইউরোপ ও মধ্যপাচ্যের পর চিনের বাজারে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের আম রপ্তানির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ফলে বিনিয়োগ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই ইউনুসের 'নতুন' বাংলাদেশের উপর জাঁকিয়ে বসছে চিন।
প্রসঙ্গত, ইউনুসের 'সেভেন সিস্টার' নিয়ে মন্তব্যের ইঙ্গিত অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ভারতের ৭ রাজ্যকে ভেঙে ফেলতে চায় বাংলাদেশ। এই একই ইচ্ছা চিনেরও। যদিও সেই চৈনিক চাল বারবার ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ইউনুসের মুখে এমন মন্তব্যে দুয়ে দুয়ে চার করতে খুব একটা অসুবিধা হচ্ছে না ভারতেরও। তাই বাংলাদেশের বাণিজ্যের রাস্তা বন্ধ করে দিল দিল্লি। অর্থাৎ ভারতের মাটি ব্যবহার করে আর ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে না ঢাকা।
সাম্প্রতিক সময়ে ওপার বাংলায় আনাগোনা বাড়িয়ে চিনা আধিকারিকরা। আর এই বিতর্কিত প্রকল্পের একটি অংশ গিয়েছে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর দিয়ে। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ভারত। পরিকাঠামো উন্নয়নের নামে এই প্রকল্প যে আদতে একটা জাল তা নিয়ে বরাবরই দিল্লি সরব হয়েছে। হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন চিনের এই প্রকল্প এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এখন ইউনুসের সরকার। তাঁর সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে ফাঁদ পাততে চাইছে বেজিং। তাই তারা বাংলাদেশিদের চিকিৎসাকে হাতিয়ার করেছে।