সুকুমার সরকার, ঢাকা: সদ্য শেষ হয়েছে দুর্গাপুজো। উৎসব শুরু হওয়ার আগে থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল বাংলাদেশে। উৎসবের মরশুমেও জারি রয়েছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু। নানা পদক্ষেপ করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এই মশাবাহিত রোগ। বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছিল গত বছর। ভয় ধরাচ্ছে এই বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতিও।
চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ২১৭ জনের। ২০২৪-এর প্রথম ৯ মাসে ১৬৩ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে শুধু গত সেপ্টেম্বরেই মৃত্যু হয় ৮০ জনের। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত সংখ্যা। প্রতি সপ্তাহে ডেঙ্গুতে সংক্রমণের সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি হারে বাড়ছে। যাতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চিকিৎসকদের কপালে। অনেকেই মনে করছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রতিটি কমিটিতে দেশের ৩ জন বিশেষজ্ঞকে সদস্য করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, চলতি বছরের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩০ হাজার ৯৩৮ জন। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বরেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজারের বেশি। দেখা যায়, গত মাসের প্রথম সপ্তাহে আক্রান্তের হার ছিল ১৪ শতাংশ। মাসের শেষে সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ২৪ শতাংশ। সেপ্টেম্বরের প্রথম ৭ দিনে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারান ১১ জন। আর শেষ ৭ দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩০। ডেঙ্গু সংক্রমণের সঙ্গে এডিস মশার বংশবিস্তারও বাড়ছে। গত বছর ৩ লক্ষ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের।
এ বছরের শুরু থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও মার্চ থেকে তা কমে এসেছিল। কিন্তু আগস্ট মাস থেকে আবার বাড়তে থাকে সংক্রমণ। কিন্তু কেন? জনস্বাস্থ্যবিদেরা জানান, জুলাই ও আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কাজগুলো তেমনভাবে হয়নি। ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পিছনে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের অতিবৃষ্টি একটি বড় কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণত দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাই মাসে। কিন্তু এবার জুলাইয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদেদের অভিযোগ, ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে স্থানীয় সরকারের আরও সংযোগের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেই সমন্বয় হয়নি। প্রতিবছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ৩ দফায় ডেঙ্গুর লার্ভা সমীক্ষা করে তা স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়। কিন্তু এবছর বর্ষা ও বর্ষাপরবর্তী সমীক্ষা হয়নি। এদিকে, ডেঙ্গু রুখতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক দল বিএনপিও।