সুকুমার সরকার, ঢাকা: ছুটির দিন জমিয়ে পরিবারের সকলে মাংসভাত খাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সেই মতো মাংস কিনতে বাবা ও স্কুল পড়ুয়া ছেলে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু আর তাঁদের ফেরা হল না। শুক্রবার সকালের ভূমিকম্প প্রাণ কেড়ে নিল দু'জনের। দুঃসংবাদ পৌঁছতেই কান্নার রোল উঠল পরিবারে। মৃত দু'জনের নাম আবদুর রহিম ও আবদুল আজিজ রিমন।
জানা গিয়েছে, আবদুর রহিম স্কুলপড়ুয়া ছেলের সঙ্গে বংশাল এলাকার একটি দোকানে মাংস কিনতে গিয়েছিলেন। তখনই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পায়েরতলার মাটি। ছেলেকে নিচে প্রাণ বাঁচাতে যাওয়ার সু্যোগটুকুও পাননি আবদুর রহিম। ওই দোকান একটি বাড়ির একতলায় ছিল। ভূমিকম্পে ওই বাড়ির ছাদের রেলিং ভেঙে তাঁদের উপর পড়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তাঁরা। ওই দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম। তাঁরও ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। তাঁর মা নুসরা আক্তার গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট নাগাদ কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পে ঢাকা-সহ চাঁদপুর, নীলফামারী, সীতাকুণ্ড, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালি, বগুড়া, বরিশাল, মাগুরা, মৌলভিবাজার থেকে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূকম্পন কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। তাতে তীব্র ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, কম্পনের মাত্রা ছিল ৫.৭। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদী। বংশালের কসাইটুলির যে ভবনটির ছাদের রেলিং ভেঙে পড়েছে, সেখানেই থাকেন মহম্মদ রৌনক। তিনি বলেন, "ভূমিকম্পে পুরো বাড়িটাই দুলছিল। ওপর থেকে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনে নিচে নামি। উপর থেকে রেলিং ভেঙে পড়েছিল। জখমদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।"
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ভূমিকম্পের ফলে একটি প্লাস্টিকের গোডাউনে আগুন ধরে যায়। দমকলকর্মীরা একঘণ্টার চেষ্টায় ওই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। গোডাউনে বড় অংশ আগুনে পুড়ে গিয়েছে বলে খবর। প্রচুর টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে খবর। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বাড়িঘরে ফাটল ধরার খবর পাওয়া গিয়েছে। মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাবিলগঞ্জ এলাকায় দেওয়াল ভেঙে রাকেশ রায় নামে এক যুবক দেওয়াল চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন। উদ্ধারকাজ চলছে বিভিন্ন জায়গায়। কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেসব প্রশাসনিক তরফে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে খবর।
