সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদ, জাতিগত সংঘাত এবং সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু উত্তর–পূর্ব ভারত। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বাংলাদেশে বিএনপি সরকারের আমলে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছিল ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’ বা ‘সাত বোন’। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অশান্তির মূল কারিগর ছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
জানা যায়, উত্তর–পূর্ব ভারতে ULFA, NDFB, NLFT, ATTF–এর মতো সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি সেই সময়ে অনেকটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। অভিযোগ ওঠে, ওই সংগঠনগুলির নেতাদের বেশিরভাগই আশ্রয়স্থল ছিল বাংলাদেশ। সেদেশের মাটি ব্যবহার করেই ভারতে একের পর এক হামলার ষড়যন্ত্র করেছিল তারা। শুধু তাই নয়, তাদের বেশ কিছু হামলা সফলও হয়েছিল। তবে নয়াদিল্লির এই অভিযোগ বারবার খণ্ডন করেছে বাংলাদেশের তৎকালীন বিএনপি সরকার। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই বাংলাদেশের মাটিতেই গ্রেপ্তার হয়েছিল ULFA কমান্ডার অরবিন্দ রাজখোয়া, অনুপ চেটিয়ার মতো নেতারা। পরে শেখ হাসিনার আমলে তাদের ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়। শুধু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেওয়া নয়। সেই সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অস্ত্র এবং বিস্ফোরক উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবেশ করত বলেও জানা যায়।
বাংলাদেশের তৎকালীন জোট সরকার (বিএনপি এবং জামাত) দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, রাজনৈতিক উত্তেজনা, এবং সন্ত্রাস দমনে মনোযোগী ছিল। ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’-এর মতো জঙ্গিবিরোধী অভিযানও করা হয় সেই সময়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলিকে সমর্থন করে কেন দ্বিচারিতা করেছিল? সেই প্রশ্ন বারবার ওঠে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সেই সময়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলাপ আলোচনায় অনেকটা ঘাটতি ছিল। দু’দেশের যোগাযোগেও ভাঁটা পড়েছিল। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞদের মতে, বিএনপি-র আমলে সীমান্ত নজরদারি এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতার যথেষ্ট অভাব ছিল।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর এবং উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটে ২০০৪ সালে। সেবছর ১ এপ্রিল গভীর রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে মোট ১০টি ট্রাক ভর্তি বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। তার মধ্যে ছিল - ৪ হাজার ৯৩০টি অত্যাধুনিক রাইফেল, ২৭ হাজার ২০টি গ্রেনেড, রকেট লঞ্চার, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং একাধিক ডিভাইস। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি সবচেয়ে বড় অস্ত্র চালানের ঘটনা ছিল। পরে জানা যায়, এগুলি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ULFA-র জন্য পাঠানো হচ্ছিল। গোটা ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল ULFA নেতা পরেশ বড়ুয়া। পরবর্তীকালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে অভ্যন্তরীণ এই 'অরাজকতা' নির্মূল করেন। ফলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরে উত্তর-পূর্ব ভারত।
