সুকুমার সরকার, ঢাকা: সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ আন্দোলনের জেরে চলতি মাসের গোড়ার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তাঁর বদলে দেশ চালানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মহম্মদ ইউনুস। রবিবার তিনি ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব দেশে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। তবে তার আগে কিছু ক্ষেত্রে জরুরি সংস্কার করা হবে।
রবিবার ড. ইউনুসের ঘোষণা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের পর দেশ পুনর্গঠন হলে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। তবে এই নির্বাচন হবে দেশের নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা সংস্থা ও গণমাধ্যম-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের পর। এদিন দুপুরে ঢাকার (Dhaka) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, রাষ্ট্রসংঘ এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাতের আয়োজন করা হয়। প্রায় ৫০ জন যোগ দেন এখানে। সংকটকালীন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশে থাকায় বন্ধু রাষ্ট্রগুলির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস (Muhammad Yunus)।
[আরও পডুন: ‘ওখানে পর্নোগ্রাফির শুটিং হয়, দুষ্টচক্র চলে’, আর জি করের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ!]
তিনি বলেন, ''বাংলাদেশ বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ, সংকটকালীন অবস্থায় তারা আমাদের সহায়তা করেছে। বর্তমানে আমরা চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। দুই সপ্তাহ হলো বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটে গিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। তিনি দেশে থেকে পালিয়ে গিয়েছেন।'' সাংবাদিক বৈঠকে ড. ইউনুস সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে বলেন, ''ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। দেশের মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার ক্ষুন্ন করেছেন। নতুন প্রজন্মকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ব্যাঙ্ক ডাকাতি করা হয়েছে।''
[আরও পডুন: কখন উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসকের দেহ? RG Kar কাণ্ডে সময় নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরা]
ইউনুসের আরও বক্তব্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা। ছাত্র আন্দোলনে শত শত মানুষ মারা গিয়েছেন। তাঁর কথায়, ''অনেক ছাত্র চোখে গুলি খেয়েছে, আমি তাদের দেখতে গিয়েছিলাম। আমরা জানি না, ওদের কী হবে। পৃথিবীর কোনও দেশের ছাত্রদের এত ত্যাগ করতে হয়নি। পৃথিবীর কোথাও নাগরিকরা এতটা মানবাধিকার বঞ্চিত হয়নি। বাংলাদেশ যত আন্তর্জাতিক চুক্তির সঙ্গে করেছে, তার যত আইনি বাধ্যবাধকতা আছে, ততগুলোই কাটিয়ে দেওয়া হবে।'' রোহিঙ্গা (Rohingya) ইস্যুতে রাষ্ট্রসংঘ, বিশ্বের একাধিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে সহায়তা অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করেছেন তিনি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এখন জোর দিচ্ছে ম্যাক্রো ইকোনমিক (Macro Economic) স্তরে স্থিতাবস্থা নিশ্চিত করতে।