সুকুমার সরকার, ঢাকা: ভূমিকম্পের পরদিনও থমথমে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত। বন্ধ দোকানপাট ও বাজার। একাধিক জায়গায় রাস্তায় ফাটল ধরেছে। এখনও পর্যন্ত ভূমিকম্পে কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নরসিংদীতে ৫ জন, বংশালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মুগদা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজিপুরে ১ জন করে মোট তিনজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গিয়েছে। জখম হয়েছেন পাঁচশোরও বেশি।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের নানা প্রান্ত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদী। ২৬ সেকেন্ডের ওই ভূমিকম্পটি গত ৩০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে উৎপত্তি হওয়া সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। ভূমিকম্পে পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। কাছাকাছি একটি গরুর খামারের মাটি ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। হেলে পড়েছে বহুতল। ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর পুরনো রেলসেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ডাংগা-কালীগঞ্জ খেয়াঘাটের মাঝি সুবাদ ভৌমিক জানান, "ভূমিকম্পের সময় নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ ছিল। ভয় পেয়েছিলাম। অনেকক্ষণ পর বুঝতে পেরেছি, ভূমিকম্প হয়েছে। তবে আমার জীবনে এমন কম্পন এটাই প্রথম।" ইসলামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ফয়সাল বলেন, "আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি। মনে করেছিলাম, বাইরে কোনো ভারী লরি যাচ্ছে। পরে দেখি পাশের কারখানার সব ভবন কাঁপছে। শ্রমিকরা মুহূর্তে বাইরে বের হয়ে আসেন। তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ভয়ে কয়েকজন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।"
পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের পাশের দোকানদার ফজলু মিঞা বলেন, "ভূমিকম্পের সময় হঠাৎ বিকট শব্দে মাটি কাঁপতে থাকে। কিছুক্ষণ পরই কলেজের গেটের ভিতর মাটিতে ফাটল দেখতে পাই। এমন ঘটনা আর কোনওদিন দেখিনি।" সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন ঘোড়াশাল বাজারের ৬ তলা ভবনের এসএ প্লাজার নিচতলার মোবাইল বিক্রেতা মোবারক হোসেন বলেন, "হঠাৎ কাঁপতে শুরু করল। মনে হল সব ভেঙে পড়ছে। আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে পড়ি। মার্কেটের ওপরতলা থেকে নামতে গিয়ে অনেকে সিঁড়িতে পড়ে যান। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।" এদিকে, ভূমিকম্পের পর বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানা ঘুরে দেখেন পলাশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী। বলেন, "সরকারি খাদ্যগুদামের ভিতরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত চাল স্থানান্তর করতে হবে। ভুক্তভোগীদের সহায়তার জন্য আমরা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছি। ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রককে জানানো হয়েছে।"
