সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পক্ষে থাকায় বিগত শাসনের অবসান দ্রুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মহম্মদ ইউনুস। বুধবার মিরপুর সেনানিবাসে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে আসেন তিনি। ডিএসসিএসসি-২০২৫-এর গ্র্যাজুয়েশনে সেনার সহায়তার কথা জানিয়েছেন তিনি। ইউনুসের সঙ্গে সাম্প্রতিক অতীতে সেনার সম্পর্ক ভাল নয় বলেই জানা গিয়েছে। এই অবস্থায় ডিএসসিএসসি-র সমাবর্তনে সেনা সহায়তার কথা বলে আসলে সেনাকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
ইউনুস বলেন, "একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বুঝতে পেরেছে, সে যেকোনও কিছু করার জন্য স্বাধীন, কিন্তু একজন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য চাইলেই সব কিছু করতে পারে না। তারা একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী, যেখানে সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতিতে একজন সেনা সদস্য কী করতে পারে! আমি নিশ্চিত যে এ নিয়ে বিতর্ক আলোচনা হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "সেনা সদস্যরা এমন পরিস্থিতিতে কী করবে? ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হবে নাকি সরকারের? এই প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা যে কারোর। বাংলাদেশ একটি সৌভাগ্যবান দেশ যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের প্রধানদের নেতৃত্বে দেশের মানুষের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। সেই কারণেই বিগত শাসনের অবসান দ্রুত হয়েছে।"
প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস আরও বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর এবং আনন্দময় করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের ২৪টি দেশের ৩১১ জন তরুণ সেনাকর্মীকে গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, "সেনাবাহিনী সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।" এই কোর্সে অংশ নেওয়া চিনের এক অফিসার বলেন, বাংলাদেশের সামরিক প্রশিক্ষণ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে চলছে এবং এটি বিভিন্ন দেশের আধিকারিকদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের এক আধিকারীক বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সময়োপযোগী এবং তারা যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, বিশেষ করে সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়, সর্বোচ্চ অবদান রাখতে প্রস্তুত।
ইউনুস বলেন, "বাংলাদেশের এই উত্তরণের মুহূর্তে আপনাদের এখানে অবস্থান খুবই গৌরবের। আমরা যা যা করছি তা খোলা চোখে দেখা যাচ্ছে। দেশের কী অবস্থা ছিল তা আপনারা জানেন। তরুণরা বিপ্লবী হয়েছিল, রক্ত দিয়েছে, বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছে, এর ফলে ওই শাসনের অবসান হয়েছে এবং নতুন একটা দেশের সূচনা হয়েছে।"
বাংলাদেশের আদালতে সাজা শোনানো হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ফাঁসির শাস্তি হয়েছে তাঁর। মহম্মদ ইউনুস জমানায় বাংলাদেশ পাক মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে চলে গিয়েছে। ভারতকে সতর্ক করেছেন হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। অন্যদিকে, মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার বনাম বাংলাদেশ সেনার দ্বন্দ্ব বহুদিন ধরেই প্রকাশ্যে। এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশের নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সুরেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেই সময়, অনেকেই মনে করেন ইউনুস গদি না ছাড়লে পদ্মাপাড়ে সেনা অভ্যুত্থান হতে পারে। যদিও সেই ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু সেনা সঙ্গে ইউনুসের সম্পর্ক যে ভালো নয়, তা প্রকাশ্যে চলে আসে সেই সময়েই। এবার সেনা সম্পর্কে ইউনুসের নতুন বক্তব্যে দুই পক্ষের মধ্যে সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত নাকি সেনাকে কাছে টানার মরিয়া চেষ্টা ইউনুসের সেই নিয়ে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।
