সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আদালতের বিচারে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা ঘিরে উত্তাল বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ফাঁসির সাজার বিরোধিতা করেছে আন্তর্জাতিক মহলের একটা বড় অংশ। মানবতা বিরোধী অপরাধীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিয়ে এভাবে সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণার বিষয়টিকে বিচারের নামে ইউনুস সরকারের চূড়ান্ত প্রহসন বলেই মনে করছে সচেতন নাগরিক মহল। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ব্যক্তি বিশেষে ন্যায়-অন্যায়ের পৃথক বিচারকেই কাঠগড়ায় তুললেন হাসিনা জমানায় অত্যাচারিত, দেশত্যাগী সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)। ফেসবুকে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, 'হাসিনার যে-কাজকে ইউনুস এবং তার জিহাদি বাহিনী অন্যায় বলে ঘোষণা করেছে, সেই একই কাজ তারা অর্থাৎ ইউনুস এবং তার জিহাদি বাহিনী যখন করছে, তখন সেই কাজকে তারা ন্যায় বলে ঘোষণা করছে!'
সোমবার বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গণহত্যা-সহ একাধিক মামলায় শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina Verdict) ও তাঁর আমলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে। এনিয়ে দিকে দিকে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন আওয়ামি লিগের সদস্যরা। এই মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশের পরিস্থিতি। এই সাজা মানতে নারাজ হাসিনা অনুগামীরা। হাসিনা বিরোধী অনেকেও আদালতের এই সাজাঘোষণা মেনে নিতে চাইছেন না। তাঁদের একটাই বক্তব্য, এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ বিচার হয়নি। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগই পাননি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী। সেই দলের এক প্রতিনিধি বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন। ইউনুস প্রশাসন 'প্রভাবিত' এই রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তসলিমার বক্তব্য, 'হাসিনার যে-কাজকে ইউনুস এবং তার জিহাদি বাহিনী অন্যায় বলে ঘোষণা করেছে, সেই একই কাজ তারা অর্থাৎ ইউনুস এবং তার জিহাদি বাহিনী যখন করছে, তখন সেই কাজকে তারা ন্যায় বলে ঘোষণা করছে। কেউ নাশকতামূলক কাজ করলে তাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়ে বর্তমান সরকার তো নিজেকে অপরাধী বলছে না। তাহলে গত বছর জুলাই মাসে নাশকতামূলক কাজ করলে তাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে হাসিনাকে কেন অপরাধী বলে গণ্য করা হচ্ছে? জুলাইয়ের যে সন্ত্রাসীরা নাশকতামূলক কাজ করেছে, মেট্রোয় আগুন দিয়েছে, স্নাইপার দিয়ে মানুষ মেরেছে, পুলিশ জবাই করেছে, তাদের কেন বিচার হবে না? বিচারের নামে প্রহসন কবে বন্ধ হবে বাংলাদেশে?'
অথচ বাংলাদেশে ধর্মীয় মৌলবাদীদের 'তাড়া খেয়ে' একসময় স্বদেশ থেকে যে তসলিমাকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল, হাসিনা আমলে কিন্তু তাঁর সেই পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। তুলনামূলক উদারপন্থী হাসিনা কিন্তু সাহিত্যিককে দেশে ফিরিয়ে পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেননি। ফলে হাসিনাকে সমর্থনের কোনও কারণ নেই তসলিমার। তাঁর কাছে শাসকমাত্রই বিরোধীপক্ষ। অপরদিকে তিনিও বরাবর শাসকের 'চক্ষুশূল'। তবু অন্যায় দেখলে তো যে কোনও সচেতন, সংবেদনশীল নাগরিক স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ করবেনই। তসলিমাও তেমনই করেছেন।
