সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সরকারের মদতে জামাত শিবিরই খুন করিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে (Osman Hadi) ! এই খুনের নেপথ্যে সরকারের অদৃশ্য হাত থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিলেন বাংলাদেশের প্রতিবাদী সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin)। বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে অশান্তির আগুনে ছুড়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর। অন্যদিকে, হাদির খুনি ভারতে পালিয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছিল, ঘটনার তিনদিন পর তা কার্যত খারিজ করেছে ইউনুসের পুলিশ। সব মিলিয়ে হাদি খুনে গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
রবিবার রাতে সোশাল মিডিয়ায় এক বিস্ফোরক পোস্ট করেন প্রতিবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তিনি লেখেন, 'কয়েক ঘণ্টা ধরে জিহাদিরা ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ছায়ানট, আর উদীচীর কার্যালয় লুঠ করেছে, ভেঙেছে, পুড়িয়েছে। পুলিশ আসেনি। মনে হচ্ছে গোটা ব্যাপারটাই করিয়েছে সরকার। পুলিশ সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পায়নি বলে কর্মস্থল ত্যাগ করেনি। দীপু কাণ্ডেও ভিকটিমের মৃত্যু হয়ে যাওয়ার পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসেছে। সময় মতো পুলিশকে আসতে বাধা দেয় কারা? হয়তো তারাই, যারা পুলিশকে নির্দেশ দেয়, এবং বলে দেয় নির্দেশ ছাড়া কোথাও, বিশেষ করে সেনসিটিভ কেসে, আচমকা উদয় না হতে!' এরপরই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে তসলিমা লেখেন, 'হাদির সম্ভাব্য আততায়ী ফয়জলের অ্যাকাউন্টে ১২৫ কোটি টাকার লেনদেন পাওয়া গিয়েছে। টাকাটা কে দিল? সরকারের অদৃশ্য হাত নয় তো?'
তসলিমার এই পোস্টের পরই উঁকি দিতে শুরু করেছে সন্দেহ। হাদির মৃত্যুর খবর সামনে আসার পর গোটা দেশ যখন জ্বলছে ঠিক সেই সময়ে আশ্চর্যভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় বাংলাদেশের পুলিশবাহিনী। খুন হন সংখ্যালঘু যুবক দীপু দাস। গুরুতর এই পরিস্থিতিতেও কোথাও পুলিশের কোনও কার্যকলাপ নজরে আসেনি। রটিয়ে দেওয়া হয় হাদির হত্যাকারী নাকি ভারতে পালিয়েছে। শুরু থেকেই সেই গুজবকে বাড়তে দেওয়া হয় বাংলাদেশ পুলিশের তরফে। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, হাদির হত্যাকারী ফয়জল করিম বাংলাদেশের সীমান্ত পার হয়ে গেছেন কি না, তা নিয়ে তাদের কাছে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই। এমনকী তিনি এও বলেন, 'অনেক সময়ই তন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে আততায়ীর অবস্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়।'
গোটা ঘটনা পর্যালোচনা করলে অনুমান করা যায়, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে থাকতে পারে ভয়ংকর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। হতে পারে, নির্বাচনকে মাথায় রেখে জামাত শিবিরই খুন করেছে হাদিকে। এই ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ মদত থাকতে পারে ইউনুস সরকারেরও। কারণ বাংলাদেশের বর্তমান ইউনুস সরকার বকলমে পরিচালিত হচ্ছে জামাতেরই অঙ্গুলিহেলনে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। তার প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছিল। সেই নির্বাচনে ভারত বিদ্বেষের ভিতের উপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া জামাত। ওয়াকিবহাল মহলের মত, হাদির হত্যা জামাতের সেই উদ্দেশ্যকেই সফল করছে। পাশাপাশি প্রবল চাপের মুখে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করলেও ক্ষমতার অলিন্দে থাকতে মরিয়া খোদ ইউনুস। এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে ঠেলে দিয়েছে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে। যা খোদ ইউনূসের স্বার্থের অনুকূলেই যায়।
প্রশ্ন উঠছে ইউনুসের পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। হত্যাকারীকে কে বা কারা ১২৫ কোটি টাকা পাঠাল? হাদির মৃত্যুর পর মুহূর্তেই পর পর এতগুলি পরিকল্পিত হামলা চলল কীভাবে? বিএনপি নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে এক শিশুকে পুড়িয়ে মারা হল, এতকিছুর পরও পুলিশের দেখা পাওয়া গেল না। এমন ভয়াবহ অরাজকতার ন্যূনতম আভাস পুলিশের কাছে ছিল না, এটা কীভাবে সম্ভব? অপরাধীর ভারত পালানোর গুজব দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লেও কেন এত দিন ধরে মুখ বুজে ছিল পুলিশ? দীপুর মৃত্যু নিয়েও পুলিশ ও খোদ ইউনুসের ভূমিকাও একই। আন্তর্জাতিক চাপের পর লোক দেখানো গ্রেপ্তারি ও চেনা বুলি আওড়াতে শুরু করেছে ইউনুস ও তার পুলিশ। গোটা ঘটনা গভীর প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। মৌলবাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ক্ষমতালোভী ইউনুসের গদি আঁকড়ে পড়ে থাকার বাসনাই এই হত্যাকাণ্ডের মূল মোটিভ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
