সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের বাংলাদেশে হামলা হিন্দু উপাসনাস্থলে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, দিনাজপুরের জেলার অন্তত ৩টি মন্দিরে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ৮টি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কালীমূর্তিও! ফলে নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে, এটাই কি ‘নতুন’ বাংলাদেশ? যেখানে যতদিন যাচ্ছে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার বাড়ছে। হিংসার হাত রেহাই পাচ্ছে না ধর্মীয়স্থানও।
জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলায় শাকুয়াই এলাকার বন্দেরপাড়া মন্দিরের ২টি মূর্তি ভাঙচুর করে দুষ্কৃতীরা। বিলডোরা এলাকায় পলাশকান্দা কালী মন্দিরেও মূর্তিতে হামলা চালানো হয়। এই মন্দিরের প্রধান সুভাষচন্দ্র সরকার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই হামলাকারীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। এনিয়ে গতকাল হালুয়াঘাট থানার ওসি আবুল খয়ের জানান, মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনায় আলাউদ্দিন নামে স্থানীয় এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, হামলা হয় দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি শ্মশান কালী মন্দিরেও। সেখানে ৫টি মূর্তি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত স্থানীয় হিন্দুরা। এমন ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি বলে জানিয়েছেন মন্দির কমিটির সভাপতি জনার্দন রায়। স্থানীয়দের দাবি, মন্দির ভাঙচুরের সময় দুষ্কৃতীরা ইসকন বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিল। ফলে গত ৪৮ ঘণ্টায় ৩টি মন্দির আক্রান্ত হওয়ায় নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
গত নভেম্বর মাস থেকে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন চরম আকার নিয়েছে। বাড়ি-দোকানপাটে হামলার পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের পিটিয়ে মারারও অভিযোগ উঠেছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় প্রভু। ভাঙচুর হয়েছে ইসকনের মন্দিরেও। যা নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে কয়েকদিন আগেই ঢাকা সফরে গিয়েছিলেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি। কিন্তু তাতেও হিন্দু নির্যাতন রুখতে তেমন কোনও পদক্ষেপ করেনি মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। উলটে ইউনুসের উপদেষ্টারা একের পর এক ভারতবিরোধী মন্তব্য করে যাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবারই প্রধান উপদেষ্টা ইউনুসের ঘনিষ্ঠ মাহফুজ আলম ‘অখণ্ড বাংলাদেশ’ গড়ার ডাক দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেখানে তিনি ভারতের একাধিক রাজ্যকেও নিজেদের অধীনে নিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। এই উসকানিমূলক মন্তব্য কোনওভাবেই যে ভারত বরদাস্ত করবে না, তা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট করে দেন। বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেন, "বিতর্কিত পোস্টটি ইতিমধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে। তবে আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে বলছি, ভারত বিরোধী মন্তব্য করা থেকে নিজেদের জনগণকে সতর্ক করুক অন্তর্বর্তী সরকার। ভারত বারবার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু এধরনের মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়। সেক্ষেত্রে সকলের দায়িত্ববোধ থাকা প্রয়োজন। ভাষা নিয়ে আরও সংযত হোন।" গতকালই বিদেশ প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং জানান, চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে হিন্দু-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ২২০০টি ঘটনা ঘটেছে।