বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর : স্কুলের টিফিনের খরচ এবং গুরুজনদের দেওয়া উপহারের টাকা খরচ না করে মাটির ভাঁড়ে জমিয়ে রাখত ১১ বছরের কিশোর আদিত্য মহলদার। যে টাকা জমে হয়েছে ৪,৩৫৭ টাকা। ইচ্ছে ছিল, এই টাকা দিয়েই একটি সাইকেল কিনবে । কিন্তু লকডাউনে দুস্থদের পরিস্থিতি দেখে মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে টাকা দান করার মনস্থির করল। তবে তবে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেও সেই ইচ্ছে অধরাই রয়ে গেল ছোট্ট আদিত্যর।
করোনা আতঙ্কে স্কুল ছুটি থাকায় বেশ কয়েকদিন ধরেই গৃহবন্দি আদিত্য। পরিবারের সবার সঙ্গে বাড়িতে টিভি দেখেছে। জানতে পেরেছে, মারণ ভাইরাস করোনার কথা, লকডাউনের জেরে গরিব, খেটে-খাওয়া মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও সমস্যার কথা। কীভাবে জুটবে তাদের দুবেলা-দুমুঠো আহার, টিভি দেখে তো বটেই, বাড়িতেও প্রত্যেকের মুখে সেই আলোচনা শুনে তার জমানো টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলেই দান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে আদিত্য ওরফে সোম। আর সেই সিদ্ধান্তের কথা বাড়ির সকলকে। বিশেষ করে, তার জ্যাঠামশাই দীনবন্ধু মহলদারকে। মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানিতে কর্মরত দীনবন্ধু বাবু ও তার সহকর্মীরা কয়েকদিন আগেই নিজেদের পকেট থেকে ১০ হাজার টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠিয়েছেন। তাই তাকেই নিজের ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের কথা প্রথম জানিয়েছিল সোম । বলেছিল, তার ভাঁড়ে জমানো সব টাকা সে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিতে চায়। ছোট আদিত্যর সিদ্ধান্তে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের গেদে উত্তরপাড়া গ্রামের অশোকবাবুদের বাড়িতে তখন ছোট সোমের জন্য অনেকেই উল্লসিত।
[আরও পড়ুন: পুড়ছে ‘অরণ্য সুন্দরী’ পুরুলিয়া, আগুনের গ্রাসে বিপন্ন অযোধ্যা পাহাড়ের বন্যপ্রাণ]
সোমের জমানো টাকার সঙ্গে তারা আরও কিছু টাকা জুড়ে দিয়ে টাকার পরিমাণ করেছেন ৫ হাজার টাকা। তারা সকলেই চান, সেই টাকা যেন গরিব মানুষের সাহায্যে কাজে লাগে। স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র সোম। সে নিজেও জানিয়েছে, “টিভিতে আমি খবরটি দেখে আমার সব টাকা আমি দিয়ে দিতে চেয়েছি। আমি চাই, ওই টাকা যেন গরিব মানুষের কাজে লাগে।” সোমের বক্তব্য, “আমি আবার টাকা জমিয়ে নতুন সাইকেল কিনব। কিন্তু এখন এই টাকা গরীবের কাজে লাগুক।” দেশের জন্য, দশের জন্য এই বয়সে সোমের দেশাত্মবোধের ভাবনা উৎসাহিত করেছে ওই এলাকার অনেক মানুষকে ।
দীনবন্ধুবাবু বুধবার ছোট ভাইপোকে নিয়ে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের স্থানীয় এবং মূল শাখায়। গিয়েছিলেন একটি সমবায় ব্যাংকেও l যদিও ছোট্ট ভাইপোকে নিয়ে দীনবন্ধু বাবু ৩টি জায়গায় গিয়েও অনেক অনুনয়-বিনয় করেও টাকা জমা দিতে পারেননি l তিনি জানিয়েছেন, ‘ প্রতিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তাদের টাকা জমা নেওয়ার নিয়ম। তারা জানিয়েছে, টাকা চেকের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। কিন্তু আমার ভাইপোর তো কোন অ্যাকাউন্ট নেই । ওর নামে কীভাবে চেকে টাকা জমা দেওয়া যাবে? ব্যাংকে ব্যাংকে দীর্ঘক্ষন ঘুরেও শেষ পর্যন্ত টাকা জমা দিতে না পেরে কিছুটা হলেও হতাশ হয়েছে আদিত্য। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সরাসরি যে ব্যাংকের শাখায় টাকা জমা দেওয়া যায়, সেই ব্যাংকের শাখা কৃষ্ণগঞ্জ-মাজদিয়াতেই নেই। রানাঘাট বা কৃষ্ণনগরে যেতে হবে। কিন্তু এই লকডাউনের সময় তাও তো সম্ভব নয়। যদিও আদিত্যর নামে টাকা জমা দেওয়ার কোন পন্থা আছে কী না, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ব্লক প্রশাসনের একজন আধিকারিক।
[আরও পড়ুন: বাঁকুড়ার বাজারে ভয়াবহ আগুন, পুড়ে ছাই ৩৫০ টি দোকান]
The post জমানো টাকা মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে দিতে চায়, একাধিক ব্যাংকে ঘুরেও ইচ্ছেপূরণ হল না কিশোরের appeared first on Sangbad Pratidin.
