নিজস্ব সংবাদদাতা, মেদিনীপুর: ‘নিক্ষয় মিত্র’ প্রকল্পে তাঁদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কেবলমাত্র বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানই নয়, এগিয়ে এসেছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরাও। তাঁরাও দায়িত্ব নিয়েছেন এক একজন যক্ষ্মারোগীকে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করার। সোমবার শরৎপল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ৫৮ জন রোগীকে মাসিক খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। মোট ছয় মাস তাঁরা ধারাবাহিকভাবে ওই খাদ্যসামগ্রী পাবেন।
পশিচম মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্য শঙ্কর সারেঙ্গী জানান, গত এক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুরে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৫৮৮ জন। যাঁদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৩৪ জন রোগী বর্তমানে চিকিৎসারত। হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসায় এঁদের শনাক্ত করা গিয়েছে। কিন্তু অনেকেই এখনও চিকিৎসার দোরগোড়ায় পৌঁছননি। ফলে তার কোনও হিসেবই পাচ্ছে না জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। অথচ রোগটি সম্পূর্ণরূপে নিরাময়যোগ্য। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক আরও বলেন, জেলায় যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে আরোগ্যের হার ৯০ শতাংশ।
আরোগ্যের হার নব্বই শতাংশের উপরে থাকলেও যক্ষ্মা রোগী সংক্রান্ত পরিসংখ্যান যথেষ্ট চিন্তায় ফেলেছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরকে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা কমলেও তাতে খুব একটা খুশি নন দপ্তরের আধিকারিকরা। এক আধিকারিকের কথায়, যক্ষ্মা রোগকে নির্মূল করতেই নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। গর্ভবতী ও শিশুদেরও উপসর্গ থাকলে যক্ষ্মা রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু অনেকেই এখনও চিকিৎসাকেন্দ্রের দিকে পা বাড়াচ্ছেন না। যা যথেষ্ট উদ্বেগের। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের ফুসফুসে যক্ষ্মার জীবাণু লুকিয়ে আছে। দেশে প্রতি মিনিটে একজন মানুষ যক্ষ্মা রোগে মারা যান। সারা বিশ্বের মধ্যে কেবলমাত্র ভারতবর্ষেই ২৬ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী রয়েছেন। আবার বেশিরভাগ এডস রোগীর মধ্যেই যক্ষ্মা রোগ বাসা বাধে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলেই এর প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে এডস রোগীদের মধ্যে।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, জেলায় প্রায় ৩০ জন এডস রোগী যক্ষ্মা রোগের শিকার। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্করবাবু বলেছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে সারা দেশ থেকে যক্ষ্মা রোগ নির্মূলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শরীরে অপুষ্টিই যক্ষ্মা রোগের অন্যতম কারণ। যক্ষ্মা রোগীদের জন্য মাসিক পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে ৩০টি ডিম, ৫০০ গ্রাম সোয়াবিন, ২ কেজি চাল, ৫০০ গ্রাম ডাল, ৫০০ গ্রাম ভোজ্য তেল, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুটের মতো খাবারের প্রয়োজন। এধরনের খাবার দিয়ে যক্ষ্মা রোগীকে সাহায্য করে মানুষকে এই কর্মসূচিতে যুক্ত কার ডাক দেওয়া হয়। এর ফলে যক্ষ্মা রোগীরা যেমন রোগ নিরাময়ের দিকে এগোবেন, তেমনই স্বাস্থ্য দপ্তরও সাহায্যকারী ব্যক্তিকে স্বীকৃতিস্বরূপ ‘নিক্ষয় মিত্র’ সার্টিফিকেট দেবে।