অর্ণব আইচ: পুকুরে চোবানো মোবাইল থেকে কি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সব তথ্য উদ্ধার হবে? মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার মোবাইল প্রায় ৩৮ ঘণ্টা পর তাঁর বাড়ি সংলগ্ন পুকুর থেকে উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু তারপরই সন্দিহান সিবিআই (CBI)। যদিও সিবিআই ফরেনসিকের সাহায্যে মোবাইলের ‘ডেটা’ উদ্ধারের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী। বিশেষজ্ঞদের মত, দীর্ঘক্ষণ জলে থাকলেও তথ্য উদ্ধারের সম্ভাবনা ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ।
অভিযোগ উঠেছে, সিবিআই তল্লাশির সময়ই নিজের দু’টি মোবাইল (Mobile) ছুঁড়ে বাড়ি সংলগ্ন পুকুরে ফেলে দেন বিধায়ক। পুকুরের জল ছেঁচে তুলে ফেলে প্রথম মোবাইলটি উদ্ধার হয় প্রায় ৩৮ ঘণ্টা পর। সিবিআইয়ের মতে, এসএসসি ও টেট নিয়োগ দুর্নীতির অন্য অভিযুক্তদের মতো ওই বিধায়কও নিজের মোবাইলেই চাকরিপ্রার্থীদের নাম, তথ্য রেখেছেন। এছাড়াও কোন কোন প্রভাবশালীর সঙ্গে বিধায়কের হোয়াটসঅ্যাপে (WhatsApp) চ্যাট হয়েছিল, সেই তথ্যও জানার চেষ্টা করছে সিবিআই।
[আরও পড়ুন: ৭২ ঘণ্টার ম্যারাথন জেরা, অবশেষে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার জীবনকৃষ্ণ সাহা]
মোবাইলে কথোপকথনের ভয়েস রেকর্ডেরও সন্ধান চালানো হচ্ছে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, এই কাণ্ডে গ্রেপ্তার পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মানিক ভট্টাচার্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বিধায়কের। অন্তত ৪ হাজার চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে তিনি টাকা তুলেছেন। ফলে কয়েকশো কোটি টাকা তিনি তুলেছেন মুর্শিদাবাদ থেকেই। নবম-দশম শ্রেণি, প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি শিক্ষক, গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগেও হাত ছিল তাঁর, এমনই অভিযোগ।
কিন্তু এই মোবাইলগুলি থেকে তথ্য কতটা উদ্ধার করা সম্ভব, সে ব্যাপারে সাইবার বিশেষজ্ঞরা দ্বিধাবিভক্ত। সাম্যজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, আই ফোন বা আধুনিক অ্যানড্রয়েড (Android) ফোন জল নিরোধক। জলে ডুবে যাওয়ার পরও ৩০ মিনিট পর্যন্ত কোনও সমস্যা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু তার পর থেকে মোবাইলের ব্যাটারি বা আইসিতে সমস্যা শুরু হতে পারে। ক্রমে মুছে যেতে পারে ডেটা। মোবাইলের কললিস্ট থেকে কাদের সঙ্গে বিধায়ক যোগাযোগ রাখতেন, তদন্তের জন্য তা-ও জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
[আরও পড়ুন: পাহাড়ে শুরুতেই ধাক্কা বিরোধী জোটে, মোর্চার ডাকা বৈঠকে গরহাজির ঘিসিংয়ের GNLF]
সাইবার বিশেষজ্ঞ হৃত্বিক লালের মত, জল থেকে মোবাইল উদ্ধারের পর ডেটা উদ্ধার করতে পারেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। প্রথমে মোবাইল খুলে তার অংশগুলি আলাদা করতে হয়। এরপর অংশগুলি পরিষ্কার করে শুকিয়ে ফেলতে হবে। সাধারণত এখন ব্যাটারি মোবাইলে ‘ইনবিল্ট’ অবস্থায় থাকে। ভেজা অবস্থায় মোবাইল চালুর ফলে শর্ট সার্কিট হয়ে গেলে সেটি আর ব্যবহার করা যাবে না। তবে সব শুকিয়ে নেওয়ার পর ফরেনসিক ‘লক ব্রেকিং মেকানিজম’-এর সাহায্যে ডেটা উদ্ধার করতে পারে। তবে এভাবে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ডেটা মোবাইল থেকে উদ্ধার করা সম্ভব। তদন্তের জন্য বিধায়কের মোবাইল থেকে ডেটা বা তথ্য উদ্ধারের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই।