স্টাফ রিপোর্টার: ১ কোটি সদস্য সংখ্যার লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে পৌঁছনো সম্ভব নয় বলেই মনে করছে বঙ্গ বিজেপির বড় অংশ। লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক সদস্য জোগাড় করতেই কালঘাম ছুটছে পদ্ম শিবিরের। প্রশ্ন উঠেছে, টেনেটুনে ১৫০ লক্ষ সদস্য নিয়েই কি এবার সন্তুষ্ট থাকতে হবে দলের রাজ্য নেতাদের?
বঙ্গ বিজেপি অবশ্য সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে নানা কৌশল নিয়েছে। প্রথমত, একশো সদস্য করতে পারলে দলীয় পদ দেওয়ার 'অফার' দেওয়া হয়েছে। এই শর্ত পূরণ করে সক্রিয় সদস্য হতে পারলে দলীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থেকে সদস্য তুলে আনতে রাজনীতিতে 'কেরিয়ার মেলা' করছে বঙ্গের গেরুয়া শিবির। রাজনীতিও হতে পারে খুব ভালো কেরিয়ার অপশন! উন্নতির শিখরে পৌঁছনোর পাশাপাশি মানুষের জন্য কাজ করার বিস্তর সুযোগ। আর ছাত্রছাত্রীদের এই সুযোগ দিতে পারে শুধু বিজেপিই। রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ, সরকারি চাকরির কোচিং সেন্টারগুলোর বাইরে ক্যাম্প করে এভাবেই সদস্য বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে বিজেপি। সেখানে নজির হিসাবে থাকবে ২০১৪ এবং ২০১৯-এ পার্টির সদস্য হওয়া ছাত্রছাত্রীদের উন্নতির গ্রাফও। বাবা-কাকার রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়াই বিজেপির নেতা হওয়া যায়, মূলত এটাই প্রচার করা হবে ক্যাম্পগুলো থেকে। দলের যুব মোর্চাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সদস্য সংগ্রহে ব্যর্থতা নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে তুলোধোনা করলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল। দলীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি ভার্চুয়াল বৈঠকে বনশল জানিয়ে দিয়েছেন, যে জেলায় সদস্য সংগ্রহ ভালো হবে না। জেলা সভাপতিরা কাজ করছেন না। তাঁদের পদে না রেখে অবিলম্বে সরিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে জেলা সভাপতিদের সঙ্গে নিজেও কথা বলতে চান সুনীল বনশল। তবে এখানেই থেমে থাকেননি মোদি—শাহর অন্যতম প্রধান সেনাপতি। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনশল রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। ক্ষুব্ধ সুনীল বলেছেন, বঙ্গ বিজেপিতে ব্যক্তিগত পছন্দের ভিত্তিতে পদ দেওয়া হচ্ছে। ফলে অযোগ্যরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে শুরু করে জেলা সভাপতি পদে বসে রয়েছেন।
দলের একাংশ বলছে, ২০১৮ সালে বাংলায় বিজেপির সাংগঠনিক চেহারাটাই আলাদা ছিল। তখন বাংলায় দলের সাংসদ ও বিধায়কের সংখ্যা কম থাকলেও সংগঠন শক্তিশালী থাকায় বুথস্তর থেকেই সদস্য সংগ্রহ অভিযানে ব্যাপকভাবে সাড়া মিলেছিল। কিন্তু বিধানসভা ও লোকসভার ভোটের পর থেকে দলের সংগঠন তলানিতে চলে গিয়েছে। বহু জেলাতেই বুথ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। রাজ্যের ৫৬ হাজারের উপরে বুথে বিজেপির সংগঠন রয়েছে বলে নেতাদের দাবি। মণ্ডলের সংখ্যা ১৩৪৩। জেলাস্তরে সংগঠন ভেঙে যাওয়ায় দলীয় সদস্যপদের জন্য আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে। যা ভাবাচ্ছে রাজ্যনেতাদের।
বিজেপি সদস্য সংগ্রহে ছাত্রদের টার্গেট করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, "আসলে বিজেপি সিপিএমের উপর জোর দিয়েছে। কখনও বলে মিসড কল, কখনও বলে ছাত্র। আসলে সিপিএমকে টার্গেট করে ওরা। ওদের ভোট বাড়লে সিপিএমের ভোট কমে। এর থেকে সুকান্তবাবু বরং সেলিমবাবুদের সঙ্গে বসে কথা বলে কিছু সদস্য নিয়ে নিলেই তো পারেন। একটা ফর্ম দিক বিজেপি, সেটা পূরণ করে প্রকাশ্যে বিলি করে দিলেই তো পারে সিপিএম।’’